এবারের ঈদে মোট ছয়টি সিনেমা মুক্তি পেয়েছে। এর মধ্যে শাকিব খান অভিনীত সিনেমা ‘বরবাদ’ সিনেমাটি রীতিমতো ঝড় তুলেছে দেশজুড়ে। নির্মাতা প্রেক্ষাগৃহ মালিকদের সঙ্গে কথা বলে এবং সরেজমিনে বিভিন্ন সিনেমা হলে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঈদের প্রথম দিন থেকেই শাকিবের ‘বরবাদ’ এর জয়জয়কার চলছে সিঙ্গেল স্ক্রিনগুলোতে। একই অবস্থা সিনেপ্লেক্সগুলোতেও। ঈদের দ্বিতীয় সপ্তাহ চলছে এখন। এখন পর্যন্ত সিঙ্গেল স্ক্রিন ও সিনেপ্লেক্সে শাকিব খানের ‘বরবাদ’ সিনেমা হাউসফুল চলছে। এর মধ্যেই বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় অনলাইনভিত্তিক ডাটাবেজ আইএমডিবির (ইন্টারনেট মুভি ডেটাবেজ) তালিকায় উঠে এসেছে মেহেদী হাসান হৃদয় পরিচালিত এই সিনেমাটি।
ডাটাবেজটির সেরা ১০০ জনপ্রিয় সিনেমার তালিকায় ৪৪তম স্থানে রয়েছে শাকিবের ‘বরবাদ’ চার্ট ঘেঁটে দেখা গেছে, চার্টবাস্টারটির প্রথমে রয়েছে হলিউড সিনেমা ‘আ মাইনক্রাফট মুভি’, সেই তালিকায় স্নো হোয়াইট, অ্যানোরা, সুপারম্যান, মিশন ইম্পসিবল: ফাইনাল রেকনিং, সিকান্দার, ক্যাপ্টেন আমেরিকা: ব্রেভ নিউ ওয়ার্ল্ড-এর পাশাপাশি স্থান পেয়েছে বাংলাদেশি সিনেমা ‘বরবাদ’। আইএমডিবিতে সিনেমাটি ৭.৪ রেটিং পেয়েছে।
হলিউড, বলিউডের সঙ্গে আইএমডিবি চার্টে বাংলাদেশি সিনেমার স্থান পাওয়াকে গর্ব হিসেবে দেখেছেন ‘বরবাদ’ নির্মাতা মেহেদী হাসান হৃদয়। উচ্ছ্বসিত এই পরিচালক বলেন, ‘আইএমডিবি চার্টে আমাদের সিনেমা ৪৪তম স্থানে জায়গা করে নিয়েছে, তাও জনপ্রিয় সিনেমা ক্যাটাগরিতে; এটা তো আমাদের জন্য অনেক আনন্দের, গর্বের। আমাদের দেশি সিনেমা এখন বিদেশে মুক্তি পাচ্ছে, এখন আইএমডিবিতে জায়গা করে নিচ্ছে। তার মানে আমাদের বাংলাদেশের সিনেমা আন্তর্জাতিক স্তরে যাচ্ছে। এটা অবশ্যই আমাদের ইন্ডাস্ট্রির জন্য খুবই আনন্দের।’
শাকিব খান বরাবরই ঢালিউডের সুপারস্টার, তবে ‘প্রিয়তমা’র পর যেন তিনি নতুন এক অধ্যায়ে প্রবেশ করেছেন। একরকম দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করা এ শাকিবকে আরও উজ্জ্বল করে তুলেছিলেন রায়হান রাফী ‘তুফান’ দিয়ে। কিন্তু এবার সেই ইনিংসকেও ছাপিয়ে গেলেন মেহেদী হাসান হৃদয়। ‘বরবাদ’-এ শাকিব খানকে এমনভাবে তুলে ধরেছেন, যা আগে কেউ কল্পনাও করেনি। একদম নতুন এক রূপে, যেন রূপালি পর্দায় ফিনিক্স পাখির মতোই যেন পুনর্জন্ম হয়েছে তার।
বরবাদ সিনেমার গল্পে কোনো জটিলতা নেই, কিন্তু গভীরতা রয়েছে। এটি মূলত এক বিত্তশালী পরিবারের বখে যাওয়া সন্তান আরিয়ান মির্জার গল্প, যে ভালোবাসে নীতুকে। তার জন্য সে পুরো দুনিয়া তছনছ করতেও প্রস্তুত! তবে সেই নীতুর কারণেই একসময় সে গ্রেপ্তার হয়। চরিত্রটি ফুটিয়ে তুলতে শাকিব খান ভয়েস মডুলেশন, সংলাপ বলার ধরন, দেহভঙ্গিমা- সবকিছুতেই এক অনন্য আকর্ষণ তৈরি করেছেন।
শুধু শাকিব নন, ছবির নায়িকা ইধিকা পালও বেশ চমক দেখিয়েছেন। গুরুত্বপূর্ণ কিছু দৃশ্যে তিনি এমনভাবে শাকিবের বিপরীতে দাঁড়িয়েছেন যে দর্শক অবাক না হয়ে পারেনি। সাপোর্টিং কাস্টেও মিশা সওদাগর, শ্যাম ভট্টাচার্য, ফজলুর রহমান বাবু এবং মানব সচদেব দারুণ পারফর্ম করেছেন। সিনেমার গানগুলোর মধ্যে ‘মহামায়া’ ও ‘নিঃশ্বাস’ বিশেষভাবে হৃদয়ে গেঁথে যাওয়ার মতো।
তবে দারুণ সব মুহূর্তের মাঝেও কিছু দুর্বলতা চোখে পড়ে। গ্রিন স্ক্রিনের ব্যবহার অনেক জায়গায় একটু কৃত্রিম লেগেছে। ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক আরও কিছুটা শক্তিশালী হলে সিনেমার ইমপ্যাক্ট আরও বাড়ত। তবে সবচেয়ে বড় আফসোস যীশু সেনগুপ্তকে নিয়ে। তার চরিত্রটি যতটা ভয়ংকরভাবে উপস্থাপন করা হয়েছিল, পর্দায় সেই শক্তিশালী উপস্থিতি ঠিকঠাক ফুটিয়ে তোলা হয়নি। অনেকেই সন্দিহান ছিলেন, নবাগত পরিচালক মেহেদী হাসান হৃদয় কি পারবেন শাকিব খানকে নতুনভাবে হাজির করতে? কিন্তু ‘বরবাদ’ দেখার পর সে সন্দেহের অবসান ঘটে। বলা চলে ‘বরবাদ’ শুধু একটি সিনেমা নয়, এটি শাকিব খানের ক্যারিয়ারে আরেকটি মাইলফলক।