ইসলাম সম্প্রীতির ধর্ম

ইসলাম ডেস্ক।। ইসলাম শান্তি, মৈত্রী ও সম্প্রীতির ধর্ম। সহনশীলতা, নিরপেক্ষতা ও সহমর্মিতা এর পরম বৈশিষ্ট্য। এখানে সাম্প্রদায়িকতার কোনো স্থান নেই। আল্লাহ এক ইসলামের এই মতবাদই ইসলামকে সহিষ্ণু করেছে। পৃথিবীর সব মানুষের ব্যক্তি জীবন, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রে শান্তি শৃঙ্খলা, নিরাপত্তা ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা ইসলামের লক্ষ্য।

আল্লাহতাআলা বলেন, আল্লাহ ছাড়া যাদেরকে তারা ডাকে, তোমরা তাদেরকে গালমন্দ করো না । তাহলে তারা ধৃষ্টতা দেখাতে গিয়ে অজ্ঞতাবশত আল্লাহকে গাল-মন্দ করবে। এমনিভাবে আমি প্রত্যেক সম্প্রদায়ের দৃষ্টিতে তাদের কাজ-কর্মকে সুশোভিত করে দিয়েছি। অতপর স্বীয় পালনকর্তার কাছে তাদের প্রত্যাবর্তন করতে হবে। তখন তিনি তাদের বলে দেবেন যা কিছু তারা করত।’ (সুরা আনআম : আয়াত ১০৮)

 আল্লাহ তাআলা বলেন-দ্বীনের (ধর্ম বা জীবন ব্যবস্থার) ব্যাপারে কোনো জবরদস্তি বা বাধ্যবাধকতা নেই। নিসন্দেহে হেদায়াত গোমরাহী থেকে পৃথক হয়ে গেছে। এখন যারা গোমরাহকারী ‘তাগুত’দের মানবে না এবং আল্লাহতে বিশ্বাস স্থাপন করবে, সে ধারণ করে নিয়েছে সুদৃঢ় হাতল যা ভেঙে যাবার নয়। আর আল্লাহ সবই শুনেন এবং জানেন।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ২৫৬)

পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, হে মানুষ, আমি তোমাদের সৃষ্টি করেছি এক পুরুষ ও এক নারী থেকে আর তোমাদের বিভক্ত করেছি বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে যাতে তোমরা একে অপরের সঙ্গে পরিচিত হতে পারো। তোমাদের মধ্যে আল্লাহর কাছে সে ব্যক্তিই অধিক মর্যাদাসম্পন্ন যে তোমাদের মধ্যে অধিক আল্লাহভীরু। নিশ্চয়ই আল্লাহ সব কিছু জানেন, সব খবর রাখেন। (সুরা হুজরাত: ১৩)

মহান আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে যারা আল্লাহ ও আখিরাতের প্রতি বিশ্বাস রাখে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে তাদের জন্য রাসুলের অনুসরণের মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ।’ (সুরা আহজাব, আয়াত: ২১)

পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আমি আপনাকে জগতসমূহের রহমত স্বরূপ পাঠিয়েছি।’ (সুরা আম্বিয়া, আয়াত: ১০৭) অর্থাৎ তিনি শুধু মুসলমানদের নবী হিসেবে প্রেরিত হননি। তার উম্মত ভিন্ন ধর্মের লোকেরাও।

বাবা-মা ইসলাম ধর্মের হোক কিংবা ভিন্ন ধর্মের, তাদের সম্মান ও অধিকার আদায়ে পবিত্র কোরআনে একাধিক আয়াত অবতীর্ণ হয়েছে। আল্লাহ বলেন, ‘আর আমি মানুষকে নির্দেশ দিয়েছি তার মা-বাবার সাথে সদাচরণ করতে…’ (সুরা আনকাবুত, আয়াত: ৮)

পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘ধর্মের ব্যাপারে যারা তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেনি এবং তোমাদের স্বদেশ থেকে বহিষ্কার করেনি তাদের সঙ্গে মহানুভবতা প্রদর্শন ও ন্যায়বিচার করতে আল্লাহ তোমাদের নিষেধ করেন না। আল্লাহ ন্যায়পরায়ণদের ভালোবাসেন।’ (সুরা : মুমতাহিনা, আয়াত: ৮)

আল্লাহ বলেন, ‘আমি মানবজাতিকে সম্মানিত করেছি, তাকে কর্তৃত্ব দিয়েছি স্থলে ও জলে, তাদেরকে দিয়েছি উত্তম জীবিকা এবং তাদের শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছি আমার সৃষ্টিজগতের অনেকের ওপর।(সুরা বনি ইসরাইল, আয়াত : ৭০)

একবার রাসুল (সা.)-এর সামনে দিয়ে একটি লাশ নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। এটি দেখে তিনি দাঁড়ালেন, তখন উপস্থিত সাহাবারা বললেন, এটি ইহুদির লাশ। রাসুল (সা.) তাদেরকে জিজ্ঞেস করলেন, সে কী মানুষ নয়? (বুখারি, হাদিস: ১৩১২)

মুসলিম দেশে রাষ্ট্রের আইন মেনে বসবাসকারী ভিন্নধর্মীদের জানের সুরক্ষা এবং মালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা মুসলিমদের দায়িত্ব। এ প্রসঙ্গে রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোনও ভিন্নধর্মী নাগরিককে হত্যা করল, সে জান্নাতের সুগন্ধও পাবে না, অথচ তার সুগন্ধ ৪০ বছরের রাস্তার দূরত্ব থেকেও পাওয়া যায়।’ (বুখারি শরিফ, হাদিস: ২৯৯৫)

ইসলাম কখনোই সাম্প্রদায়িক হামলা এবং অন্য ধর্মের লোকদের প্রতি অবিচার করাকে সমর্থন করে না। সমাজ ও রাষ্ট্রকে অশান্তি, জুলুম ও বিশৃঙ্খলামুক্ত করার নির্দেশ ইসলামে রয়েছে বলেই ইসলাম শান্তির ধর্ম।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *