মৃত পিতা মাতার জন্য সন্তানের করণীয়

ইসলাম ডেস্ক।। যাদের মা-বাবা অনন্ত জীবনে পাড়ি দিয়েছেন, সুসন্তান হিসেবে তাদের উচিত মৃত বাবা-মায়ের জন্য দোয়া করা। মৃত মা-বাবার জন্য কোরআনে বর্ণিত তিনটি দোয়া।

‘রাব্বির হামহুমা, কামা রাব্বায়ানি সাগিরা।’ অর্থ: ‘হে আমার প্রতিপালক, তাদের উভয়ের প্রতি রহম করো; যেমন তারা আমাকে শৈশবকালে লালন-পালন করেছেন।’ (সুরা বনি ইসরাইল: ২৪)

‘রাব্বানাগ ফিরলি ওয়ালি ওয়ালিদাইয়া, ওয়ালিল মু’মিনিনা ইয়াওমা ইয়াক্বুমুল হিসাব।’ অর্থ: ‘হে আমাদের প্রতিপালক! রোজ কেয়ামতে আমাকে, আমার পিতা-মাতা ও সকল মুমিনকে ক্ষমা করুন।’ (সুরা ইবরাহিম: ৪১)

‘রাব্বিগ ফিরলি ওয়ালি ওয়ালিদাইয়া, ওয়া লিমান দাখালা বাইতিয়া মু’মিনাও ওয়ালিল মু’মিনিনা ওয়াল মু’মিনাত। ওয়ালা তাজিদিজ জা-লিমিনা ইল্লা তাবারা।’ অর্থ: ‘হে আমার রব! আমাকে, আমার পিতা-মাতাকে, যে আমার ঘরে ঈমানদার হয়ে প্রবেশ করবে তাকে এবং মুমিন নারী-পুরুষদের ক্ষমা করুন এবং আপনি জালিমদের ধ্বংস ছাড়া আর কিছুই বাড়িয়ে দেবেন না।’ (সুরা নুহ: ২৮)

এক হাদিসে রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘মানুষ মৃত্যু বরণ করলে— তার যাবতীয় আমল বন্ধ হয়ে যায়, তবে তিনটি আমল কখনো বন্ধ হয় না। (১) সাদকায়ে জারিয়া (এমন দান-অনুদান; যার সওয়াব চলমান থাকে) (২) এমন জ্ঞান— যার দ্বারা মানুষ উপকৃত হয় এবং (৩) নেক সন্তান— যে তার মৃত বাবা মায়ের জন্য সবসময় দোয়া এবং আমল করে।’ (মুসলিম: ৪৩১০)

হাদিসের ঘোষণা অনুযায়ী, কোনো সন্তান মৃত বাবা-মায়ের জন্য দোয়া করলে আল্লাহ তাদের নেয়ামত ও সুখ-শান্তি আরও বাড়িয়ে দেন। আরেক হাদিসে এসেছে, সন্তানের দোয়ার কারণে মৃত মা-বাবার মর্যাদা বাড়িয়ে দেওয়া হয়। রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন, ‘মানুষের মৃত্যুর পর তার মর্যাদা বৃদ্ধি করা হয়। তখন সে বলে, হে প্রভু! এটা কী জিনিস? তাকে বলা হয়, তোমার সন্তান তোমার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেছে’। (আল-আদাবুল মুফরাদ: ৩৬)

শাইখ মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল মুনাজ্জিদ হাফিজাহুল্লাহ বলেনঃ যদি মৃত ব্যক্তির পরিবার বিশেষভাবে (কুলখানি চল্লিশা উপলক্ষে কুরআন) তিলাওয়াত করে এবং মৃত্যুর তিন দিন ও চল্লিশ দিন পর খাবারের জন্য মানুষদের আমন্ত্রণ করে, তাহলে তা হবে বিদ’আত (নিন্দনীয় আবিষ্কার)। এবং প্রতিটি বিদ’আতই হচ্ছে পথভ্রষ্টতা।

ইসলামে এসব দিবসের কোন মূল্যই নেই। যদি মূল্য থাকতো তাহলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজেই তা পালন করতেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর ছেলেগণ নবীজী সাঃ এর জীবদ্দশায় ইন্তেকাল করেছেন। কিন্তু নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কোন সন্তানের বেলায়ই উক্ত অনুষ্ঠানগুলোর আয়োজন করেন নি। খোলাফায়ে রাশেদীন সহ কোন সাহাবী রাসূলুল্লাহ সাঃ এর জন্য উপরোক্ত আয়োজন করেন নি। কোন মুহাদ্দিস, কোন মুফাসসির, কোন তাবেঈ, কোন তাবে-তাবেঈ, কোন মুজতাহিদ ইমামগণ উক্ত অনুষ্ঠান পালন করেন নি। কুরআন ও হাদিস বা ফিকহের কিতাবে এরকম অনুষ্ঠানের কথা উল্লেখ নেই। তাই এসব পালন করা বিদ’আত।

ইসলামের বিধান হল, কেউ মারা গেলে মৃত ব্যক্তির পরিবারের জন্য অন্য মুসলিমেরা খাবার তৈরি করবে। আবদুল্লাহ ইবনে জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত, যখন রাসূল (সাঃ) এর কাছে জাফর ইবনে আবু তালিব (রাঃ) এর মৃত্যু সংবাদ পৌঁছল, তিনি বললেনঃ “জাফরের পরিবারের জন্য খাবার তৈরি কর, কেননা তারা কঠিন বিপদগ্রস্থ, খাবার তৈরি করার মানসিকতা তাদের নেই”। 
[সুনান আবু দাউদ]

ইসলামের বিধান অনুযায়ী আমরা আমাদের মৃত মা বাবা ও আত্মীয় স্বজনদের জন্য যে সকল কাজ করতে পারি-

১) মৃত ব্যক্তির জন্য ব্যক্তিগত ভাবে দোয়া করা
২) তাদের পক্ষ থেকে সদকায়ে জারিয়া করা
৩) তাদের ঋণ পরিশোধ করা
৪) তাদের ওসিয়ত পূরণ করা
৫) তাদের পক্ষ থেকে হজ্জ ও উমরাহ আদায় করা

৬) শরীয়ত সম্মত উপায়ে তাদের কবর যিয়ারত করা
৭) তাদের বন্ধু-বান্ধবদের সাথে ভাল ব্যবহার করা
৮) তাদের অনাদায়কৃত রোযা আদায় করা ইত্যাদি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *