বিকাশ রায় চৌধুরী, সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার।। ঠাকুরগাঁও সদরের পালপাড়া গ্রামের কৃষ্ণা পাল। যার শৈল্পিক ছোঁয়ায় তৈরি হচ্ছে মাটির হাড়ি, কলসি, থালা খেলনা ওয়ালমেটসহ বিভিন্ন সামগ্রী।
শুধু কৃষ্ণা পাল নয় আদি পেশা হিসেবে এ গ্রামে শিল্পটিকে ধরে রেখেছে ২০০টি পরিবার। যাঁদের অধিকাংশই নারী। তবে তাদের রোজগারে বাঁধা হয়ে এসেছে মাটি, জ্বালানি কাঠ ও পুঁজির সংকট।
এই শিল্পের সঙ্গে জড়িতরা বলছেন, উপকরণের দাম বেড়ে যাওয়ায় উৎপাদন খরচও বেড়েছে। কিন্তু সে অনুযায়ী দাম পাচ্ছেন না তাঁরা। তাই সহজ শর্তে ব্যাংক ঋণ প্রশিক্ষণ সহ নানা সহযোগিতা চান তারা।
বুধবার সদরের আঁকচা ইউনিয়নের পালপাড়া গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, হরেশ পালের স্ত্রী কৃষ্ণা পাল, পার্বতী পালসহ বেশ কয়েকজন নারী এঁটেল মাটির সঙ্গে প্রয়োজন মতো পানি দিয়ে সেই মাটি মাড়িয়ে বিভিন্ন ধরনের আসবাবপত্র তৈরি করছেন। কাজের ফাঁকে কৃষ্ণা পাল,পাবর্তীপালসহ কয়েকজন নারী জানান, তাদের সন্তানদের কেউ এ পেশায় আসেননি।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তাঁরা বলেন, পরবর্তী প্রজন্ম এই পেশায় থাকলে না খেয়ে মরবে। এই কাজে টিকে থাকা খুব কঠিন। সেটা চাইনা বলে সন্তানদের অন্য কাজে দিচ্ছি।
পাল পাড়ার বাসিন্দা রাধিকা পাল জানান, বাপ-দাদার আমল থেকে এই পেশায় নিয়োজিত। ছোটবেলায় দেখেছেন এই পেশার রমরমা ব্যবসা। ব্যাপক চাহিদা ছিল এসব পণ্যের। কিন্তু এখন প্লাস্টিক সিরামিক আর মেলামাইনের দাপটে হারিয়ে যেতে বসেছে সব।

রাধিকা পালের কথা শেষ না হতে পাশে থাকা মৃৎশিল্পী রবি পাল বলেন,আগে সবকিছু ফ্রিতে পাওয়া যেতো। এখন মাটি, লাকড়ি সবকিছু কেনা লাগে। টাকা দিয়ে পোষাতে পারি না।
নেন্দুলা পালসহ অন্যরা জানিয়েছেন,পাল পাড়ায় আগের সেই কর্মচাঞ্চল্য না থাকায় এখানকার মৃৎশিল্পের সঙ্গে জড়িত পরিবারগুলো দুর্দশায় দিন কাটাচ্ছে।

আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি হওয়ায় পাশাপাশি অন্য কাজ করতে হয় তাদের। ষাটোর্ধ্ব বৃদ্ধ হরেন পাল আক্ষেপ করে বলেন,এই ইউনিয়নে পাল সম্প্রদায়ের প্রায় ৬০০ -৭০০পরিবার একসময় মৃৎশিল্প তৈরির কাজে ব্যস্ত সময় কাটাত। এখন ১৮০ থেকে ২০০টি পরিবার এ পেশায় জড়িত। আয় কমে যাওয়ায় গত কয়েক বছরে অনেকে পেশা পরিবর্তন করতে বাধ্য হয়েছেন।
মৃৎশিল্পকে টিকিয়ে রাখতে কারিগরি ও আর্থিক সহযোগিতা কার্যক্রম সম্প্রসারণের আশ্বাস দিয়ে ঠাকুরগাঁও বিসিক শিল্পনগরীর উপ-ব্যবস্থাপক হাফিজুর রহমান বলেন,এই শিল্পকে অর্থ সহায়তা দেওয়ার মাধ্যমে একটি ভালো অবস্থায় নিয়ে আসা প্রয়োজন। সে লক্ষ্যে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।