কোরআন-হাদিস এ দানের নির্দেশনা ও নীতিমালা

ইসলাম ডেস্ক।। ইসলামে একটি গুরুত্বপূর্ণ নেক আমল দান করা । এর অনেক ফযীলতও বর্ণিত হয়েছে কুরআন-হাদীসে। তাই ইসলামের অপরাপর আমলের মতো এই গুরুত্বপূর্ণ আমলটির জন্যও রয়েছে অনন্য সাধারণ কিছু নির্দেশনা ও নীতিমালা। কাজেই সে নির্দেশনাগুলো আমাদের জানা দরকার।

দান করার ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে বিশ্বাসীরা! তোমাদের আমি যা দিয়েছি তা থেকে দান করো সেই দিন আসার আগে, যেদিন কোনো রকম বেচাকেনা, বন্ধুত্ব এবং সুপারিশ থাকবে না।(সুরা : বাকারা, আয়াত : ২৫৪)

আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্য ছাড়া অন্য কোনো উদ্দেশ্যে এ দান প্রদান করা হলে পরকালে আল্লাহ এ দানের পুরস্কার দেবেন না। দান করার পর দানকারী যদি দান গ্রহণকারীকে দানের জন্য খোঁটা দিয়ে কষ্ট দেয়, তাহলে ওই দান ফলশূন্য হয়ে যায়। সে প্রসঙ্গে কোরআন শরিফে বলা হয়েছে, ‘যে দানের পর কষ্ট দেওয়া হয় তার থেকে সুন্দর কথা বলা এবং মাফ চাওয়া উত্তম…।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ২৬৩)

দানের কথা প্রচার করা উচিত নয়। এ ব্যাপারে কোরআন শরিফে বলা হয়েছে, ‘হে বিশ্বাসীরা! তোমরা দানের কথা প্রচার করে এবং (দান গ্রহণকারীকে) কষ্ট দিয়ে তোমাদের দানকে বরবাদ করে দিয়ো না, ঠিক ওই লোকের মতো যে শুধু লোক দেখানোর উদ্দেশ্যেই দান করে…।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ২৬৪)

আর যারা নিজেদের সম্পদ ব্যয় করে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ এবং নিজেদের মধ্যে পরিপক্বতা আনয়নের জন্য, তাদের দৃষ্টান্ত এ রকম- যেমন কোনও টিলার উপর একটি বাগান রয়েছে, তার উপর প্রবল বৃষ্টিপাত হল, ফলে তা দ্বিগুণ ফল জন্মাল। যদি তাতে প্রবল বৃষ্টি নাও পড়ে, তবে হালকা বৃষ্টিও (তার জন্য যথেষ্ট)। আর তোমরা যা কিছু কর, আল্লাহ তা অতি উত্তমরূপে দেখেন। -(সূরা বাকারা; ২৬৫)

হে মুমিনগণ! তোমরা যা কিছু উপার্জন করেছ এবং আমি তোমাদের জন্য ভূমি থেকে যা কিছু উৎপন্ন করেছি, তার উৎকৃষ্ট জিনিসসমূহ থেকে একটি অংশ (আল্লাহর পথে) ব্যয় কর। -সূরা বাকারা (২) : ২৬৭

দান প্রকাশ্যে বা গোপনে প্রদানের ব্যাপারে কোরআন শরিফে বলা হয়েছে, ‘তোমরা যদি প্রকাশ্যে দান করো তা ভালো, আর যদি গোপনে তা করো এবং অভাবীকে দাও, তবে তা হবে তোমাদের জন্য আরো ভালো; এতে আল্লাহ তোমাদের কিছু কিছু পাপ মুছে দেবেন…।’ (সুরা : বাকারা : ২৭১)

কী উদ্দেশ্যে দান করতে হবে সে ব্যাপারে কোরআন শরিফে বলা হয়েছে, ‘…তোমরা যা কিছু দান করো তা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই করো, আর যা কিছু তোমরা দান করো, তার পুরস্কার পুরোপুরি প্রদান করা হবে।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ২৭২)

তারা যেহেতু অতি সংযমী হওয়ার কারণে কারো কাছে সওয়াল করে না, তাই অনবগত লোকে তাদেরকে বিত্তবান মনে করে। তোমরা তাদের চেহারার আলামত দ্বারা তাদেরকে (অর্থাৎ তাদের অভ্যন্তরীণ অবস্থা) চিনতে পারবে। -সূরা বাকারা (২) : ২৭৩

দান করলে আল্লাহর কাছ থেকে পরকালে কী কী প্রতিদান পাওয়া যাবে সে ব্যাপারে কোরআন শরিফে বলা হয়েছে, ‘যারা দিন-রাত প্রকাশ্যে ও গোপনে তাদের ধন-সম্পদ দান করে, তাদের জন্য তাদের প্রতিপালকের কাছে পুরস্কার রয়েছে; তাই তাদের কোনো ভয় নেই এবং তারা কোনো দুঃখও পাবে না।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ২৭৪)

তোমরা কিছুতেই পুণ্যের নাগাল পাবে না, যতক্ষণ না তোমরা তোমাদের প্রিয় বস্তু হতে (আল্লার জন্য) ব্যয় করবে। -সূরা আলে ইমরান (৩) : ৯২

নিশ্চয়ই সকল আমল নিয়তের উপর নির্ভরশীল। আর প্রত্যেক ব্যক্তি তা-ই পাবে, যার নিয়ত সে করবে। -সহীহ বুখারী, হাদীস ১; সহীহ মুসলিম, হাদীস ১৯০৭

তুমি মিথ্যা বলেছ! তুমি খরচ করেছ- যাতে তোমাকে দানবীর বলা হয়। তা বলা হয়ে গেছে। অতঃপর তার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হবে। তাকে টেনে-হিঁচড়ে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ১৯০৫; মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ৮২৭৭

আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য যা-ই তুমি খরচ করবে, তার প্রতিদান দেয়া হবে; এমনকি স্ত্রীর মুখে তুমি যে খাবারের লোকমা তুলে দাও! -সহীহ মুসলিম, হাদীস ১৬২৮; সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস ৪২৪৯

যে ব্যক্তি হালাল উপার্জন থেকে একটি খেজুর পরিমাণ দান করে, -আর আল্লাহ ‘হালাল’ ছাড়া গ্রহণ করেন না- আল্লাহ তা ডান হস্তে গ্রহণ করেন। অতঃপর তা লালন-পালন করে বড় করতে থাকেন। যেমন তোমরা ঘোড়ার বাচ্চা লালন-পালন কর। একপর্যায়ে এই ‘সামান্য দান’ পাহাড়সম হয়ে যায়। -সহীহ বুখারী, হাদীস ১৪১০; সহীহ মুসলিম, হাদীস ১০১৪

জাহান্নাম থেকে আত্মরক্ষা করো, খেজুরের এক টুকরো (পরিমাণ সদকা করে) হলেও। -সহীহ বুখারী, হাদীস ১৪১৭; সহীহ মুসলিম, হাদীস ১০১৬

তুমি তোমার সন্তান-সন্ততিকে দরিদ্র অবস্থায় রেখে যাবে আর তারা মানুষের কাছে হাত পাতবে, এরচে’ অনেক উত্তম হচ্ছে তাদেরকে সচ্ছল অবস্থায় রেখে যাওয়া। আর তুমি যে খরচই কর না কেন, তা যদি আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে হয়ে থাকে তবে আল্লাহ তোমাকে সওয়াব দান করবেন। এমনকি একটি লোকমা, যা তুমি তোমার স্ত্রীর মুখে তুলে দাও। (দ্র. সহীহ বুখারী, হাদীস ৪৪০৯)

যে এমনভাবে দান করে যে, ডানহাতে দান করলে বামহাতও টের পায় না। -সহীহ বুখারী, হাদীস ১৪২৩

এক-দুই লোকমা খাবার বা এক-দুইটি খেজুরের জন্য যে মানুষের দ্বারে দ্বারে ধরনা দেয়- অভাবী তো সে নয়; প্রকৃত অভাবী হল, যার অভাব আছে, কিন্তু তাকে দেখে তার অভাব আঁচ করা যায় না; যার ভিত্তিতে মানুষ তাকে দান করবে। আবার চক্ষুলজ্জায় সে মানুষের দুয়ারে হাতও পাততে পারে না। -সহীহ বুখারী, হাদীস ১৪৭৯; সহীহ মুসলিম, হাদীস ১০৩৯

মিসকীনকে দান করলে কেবল দান করার সওয়াব লাভ হয়। আর আত্মীয়-স্বজনকে দান করলে দুটি সওয়াব- দান করার সওয়াব এবং আত্মীয়তার হক আদায় করার সওয়াব। -জামে তিরমিযী, হাদীস ৬৫৮; মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ১৬২৩৩

যখন তুমি (অতি প্রয়োজন বা লোভের কারণে) মাত্রাতিরিক্ত মিতব্যয়ী বা হাড়কিপটে হও এবং সম্পদ হাতছাড়া হয়ে যাওয়ার আশংকা কর, অথবা যখন তুমি সুস্থাবস্থায় দীর্ঘায়ুর প্রত্যাশা কর তখন সদকা করা। এত দেরি করো না যে, মৃত্যু এসে যায় আর তখন তুমি (ওসিয়ত করে) বলছ- আমার সম্পদগুলো অমুকের জন্য, অমুকের জন্য! অথচ (তুমি না বললেও) তা তাদের জন্য হয়েই আছে। -মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ৯৭৬৮; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস ২৭০৬

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *