ইসলাম ডেস্ক:
বাংলাদেশের কোনো কোনো মসজিদে অতি যত্নের সঙ্গে লেখা থাকে, ‘মসজিদে দুনিয়াবি কথা বলা হরাম’। মসজিদে দুনিয়াবি কথা বলা,এ ব্যাপারে শরিয়তের নির্দেশনা কি?
একমাত্র তারাই আল্লাহর মসজিদসমূহ আবাদ করবে, যারা আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি ঈমান রাখে, সালাত কায়েম করে, যাকাত প্রদান করে এবং আল্লাহ ছাড়া কাউকে ভয় করে না। আশা করা যায়, ওরা হিদায়াতপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে। (সুরা বাকারা: ১৮)
আল্লাহ বলেন, যেসব গৃহকে মর্যাদায় সমুন্নত করতে এবং তাতে তাঁর নাম স্মরণ করতে আল্লাহ নির্দেশ দিয়েছেন, সেখানে সকাল ও সন্ধ্যায় তাঁর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে এমন ব্যক্তিরা যাদেরকে ব্যবসা-বাণিজ্য এবং ক্রয় বিক্রয় আল্লাহর স্মরণ থেকে, নামাজ কায়েম ও জাকাত প্রদান থেকে বিরত রাখে না, তারা ভয় করে সেই দিনকে যেদিন অন্তর ও দৃষ্টিসমূহ বিপর্যস্ত হয়ে পড়বে। (সুরা নুর: ৩৬, ৩৭)
মসজিদে দুনিয়াবি কথা বলারও দুটো দিক আছে। একটি সাধারণ পারিবারিক ও বন্ধুত্বের আলাপ-আলোচনা। আরেকটি হলো গোনাহের আলোচনা। মসজিদের দুনিয়াবি কথা বলা হারাম বলতে দ্বিতীয় ধরনের কথাবার্তাকে বোঝানো হয়েছে।
মসজিদে দুনিয়াবি কথা বলা হারাম কথাটি এভাবে না বলে, মসজিদে অশ্লীল ও অনর্থক কথাবার্তা থেকে বিরত থাকা এবং মসজিদের বাইরেও এসব না করা- এভাবে বলাই শ্রেয়। (বুখারি শরিফ, ১ম খন্ড, ৬৩ পৃষ্ঠা; রদ্দুল মুহতার, ১ম খন্ড, ৬৬২ পৃষ্ঠা; ইতহাফু সাদাতুল মুত্তাকিন, ৩য় খন্ড, ৩১ পৃষ্ঠা)
ইসলামের ইবাদত খানা ‘মসজিদ’ শুধু ইবাদত খানাই নয়, এটি সামাজিক এবং রাষ্ট্রীয় কর্মকাণ্ডের কেন্দ্র হিসেবেও রাসুল (স.) এর সময় থেকে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। রাসুল (স.) সাহাবিদের নিয়ে মসজিদে গল্প করতেন, হাসির কথা বলতেন, বিচার করতেন, সফরসূচি ঠিক করতেন।
রাসুলুল্লাহ (স.) মসজিদে বেচা-কেনা বা হারানো বস্ত্ত খুঁজে পাওয়ার এলান করতে নিষেধ করেছেন। (আবু দাউদ: ১০৭৯)
কোনো দ্বীনি কাজের জন্য মসজিদে যাওয়ার পর প্রসঙ্গক্রমে দুনিয়াবী কোনো বৈধ কথাবার্তা বলা জায়েজ। এর বৈধতা রাসুলুল্লাহ (স.) এবং সাহাবায়ে কেরামের আমল দ্বারা প্রমাণিত। ( সহিহ বুখারি: ১/৬৩, ৬৪, ৬৫; রদ্দুল মুহতার (শামী): ১/৬৬২; আললু’লুউল মারসু: ৭৮, সহিহ মুসলিম: ২৮৫)
“সায়িব বিন ইয়াযিদ রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি মসজিদে নববীতে দাঁড়িয়েছিলাম। এমন সময় একজন লোক আমার দিকে একটি কঙ্কর নিক্ষেপ করলো। আমি তাঁর দিকে তাকিয়ে দেখলাম, তিনি উমর ইবনুল খাত্তাব রাযিয়াল্লাহু আনহু।
তিনি বললেন, যাও, এ দুজনকে আমার কাছে নিয়ে এসো। আমি তাদের নিয়ে এলাম। তিনি বললেন, তোমরা কারা? অথবা তিনি বললেন, “তোমরা কোন এলাকার লোক?” তারা বললো, “আমরা তায়েফের অধিবাসী।” তিনি বললেন, “তোমরা যদি মদীনার কেউ হতে, তবে আমি অবশ্যই তোমাদের কঠোর শাস্তি দিতাম। তোমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মসজিদে উচ্চৈঃস্বরে কথা বলছো!”(সহীহ বুখারী: ৪৭০)