ইসলাম ডেস্ক।। ফরজ নামাজের পর মাঝে মধ্যে একক ভাবে হাত তুলে দুআ-মুনাজাত করা জায়েজ এবং হাদিসে বর্ণিত বিভিন্ন জিকির, তাসবিহ, আয়াতুল কুরসি, সূরাতুল ইখলাস, সূরাতুল ফালাক, সূরাতুন নাস ইত্যাদি পাঠ করা সুন্নত। কিন্তু ইমাম এবং মুক্তাদিগণ ফরজ সালাতের পরে সম্মিলিত ভাবে মুনাজাত করা প্রসঙ্গে বিজ্ঞ আলেমদের পক্ষে ও বিপক্ষে অভিমত।
মুহাম্মদ বিন আহমাদ আল মালেকী বলেছেন, আল কারাফী বলেছেন, “ইমাম মালিক রাহ. এবং উলামাগণের একটি জামাত মসজিদের ইমাম ও জামাতের ইমামের জন্য ফরজ নামাজের পর উচ্চস্বরে দুআ করা অপছন্দ করেছেন।” [আদ্দুররুস সামীন: ১/৩০৯]
শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনু তাইমিয়াহ বলেছেন, নামাজের পর ইমাম এবং মুক্তাদিগণ সবাই একত্রিত হয়ে দুআ করা বিদআত। এটি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর যুগে ছিল না। বরং তাঁর দুআ ছিল নামাজের অভ্যন্তরে। কেননা একজন নামাজি ব্যক্তি নামাজের মধ্যে তার রবের সাথে সঙ্গোপনে কথা বলে। সুতরাং রবের সাথে সঙ্গোপনে কথা বলার সময় দুআ করা অধিক উপযুক্ত। নিভৃত কথপোকথন শেষ করার পরে দুআ করা উপযুক্ত নয়।
বরং নামাজ শেষ করার পর সুন্নত হচ্ছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণিত জিকির-আজকার তথা লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ, আলহামদু লিল্লাহ এবং আল্লাহু আকবর ইত্যাদি পাঠ করা।” [মাজমুউল ফাতাওয়া লিইবনে তাইমিয়াহ, ২ ২/৫১৯]
ইমাম ইবনুল কায়্যেম আল জাওযিয়্যাহ বলেছেন, “অতঃপর সালামের পর কিবলামুখী হয়ে দুআ করা অথবা মুক্তাদিগণের দুআ করা। এটা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর আদর্শ ছিল না।” [যাদুল মাআদ: ১/২৪৯]
আহমদ বিন গানিম আল মালেকী বলেছেন, “ফরজ নামাজের পর জিকির ও তাসবিহ করা কাঙ্খিত। আর দুআ করার দ্বারা ব্যস্ত থাকা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং সালাফে সালেহ তথা পূর্বসূরীদের থেকে কোন আমল বর্ণিত হয়নি।” [আলফাওকিহুদ দাওয়ানী: ১/২১৪]
ইমাম আব্দুল আযীয বিন বায রাহিমাহুল্লাহ বলেছেন, “অতঃপর ফরজ নামাজের পর ইমাম এবং মুক্তাদিগণ সবাই একত্রিত হয়ে দুআ করা বিদআত। তা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর যুগে ছিল না বরং তাঁর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দুআ ছিল নামাজের মধ্যে। সুতরাং মুনাজাতের অবস্থায় দুআ করা তার জন্য উপযুক্ত হবে।” [মাজমুউল ফাতুয়া: ২২/৫১৯]
শায়েখ সালিহ আলফাওযান বলেছেন, “নামাজের পর জামাতবদ্ধ দুআ করা বিদআত। কেননা তা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তাঁর সাহাবিগণ হতে বর্ণিত হয়নি। এমনকি সোনালী যুগের কারো থেকে প্রমাণিত নাই যে, তাঁরা জামাতবদ্ধ দুআ করতেন এভাবে যে, ইমাম তার দুই হাতকে উত্তোলন করতেন, এরপর তারা (মুক্তাদিগণ) তাদের দুই হাত উত্তোলন করতেন এবং দুআ করতেন ও তারা তার সাথে দুআ করতেন। এটা বিদআতের অন্তর্ভুক্ত।” [ফাতাওয়া সালিহ আলফাওযান: ৬৮০]
সাউদি আরবের স্থায়ী ফতোয়া বোর্ড বলেছে, “ফরজ নামাজের পর দুআ করা সুন্নাত নয় যখন তা হবে হাত সমূহ উত্তোলনের দ্বারা- তা শুধু ইমামের পক্ষ থেকে হোক অথবা মুক্তাদির পক্ষ থেকে হোক অথবা উভয়ের পক্ষ থেকে হোক। বরং এটা বিদআত। কেননা তা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং তাঁর সাহাবিগণ রাযি আল্লাহু আনহুম হতে বর্ণিত হয়নি।” [ফাতাওয়া লাজনাতুদ দায়েমাহ: ৭/১০৩]
ফরজ নামাজের পর সম্মিলিত মুনাজাতের পক্ষে দলিল পেশ করেন-
ইমাম তাবারী বলেছেন, “অতঃপর যখন তুমি তোমার নামাজ থেকে অবসর হবে তুমি তোমার রবের দিকে দুআতে মনোযোগ দাও এবং তোমার প্রয়োজন চাও।” [তাফসীরু তাবারী, ২৪/৪৯৬]
ইবনুল জাওযী বর্ণনা করেছেন, “নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন দুআ করতেন তিনি তাঁর দুই হাতকে উত্তোলন করতেন।” [ইলামুল আলিম: হাদিস নম্বর: ৪০৩]
ইমাম ইবনু কাসীর বর্ণনা করেছেন, রসূলুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সালাম ফিরানোর পর তাঁর দুই হাতকে উত্তোলন করতেন।” [তাফসীরু ইবনে কাসীর: ২/৩৪৫]
ইমাম তাবারানী বর্ণনা করেছেন, “রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নামাজ থেকে অবসর না হওয়া পর্যন্ত তিনি তাঁর দুই হাতকে উত্তোলন করতেন না।” [তাবারানী হাদিস নম্বর: ১৪৯০৭] এই হাদিসকে হাফিয হায়সামী বলেছেন, এর বর্ণনাকারী সবাই নির্ভরযোগ্য।
ইমাম তিরমিযী বর্ণনা করেছেন, “বলা হল: হে আল্লাহর রাসূল, কোন সময়ের দুআ কবুলের অধিক নিকটবর্তী? তিনি বললেন, শেষ রাতের মধ্যবর্তী সময়ে এবং ফরজ নামাজ সমূহের পর।” এই হাদিসটিকে ইমাম তিরমিযী হাসান বলেছেন। [সুনানু তিরমিযী: ৩৪৯৯]
শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনু তাইমিয়াহ বলেছেন, “অতঃপর এ দ্বারা উদ্দেশ্য সেই দুআ যাতে মুক্তাদিগণ আমীন বলবে। যেমন: কুনুতের দুআ।” [মাজমুউল ফাতাওয়া: ২৩/১১৮]
ইমাম তাবারানী বর্ণনা করেছেন, সালমান রাযি আল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, কোন কওম তাদের হাত তুলে আল্লাহর নিকটে দুআ করে কোন কিছু চাইলে আল্লাহর উপর তাদের হক যে, তিনি তাদের হাতে কিছু রাখবেন যা তারা চেয়েছে।” [তাবারানী হাদিস নম্বর: ৬১৪২]
এই হাদিসটির ব্যাপারে হাফিজ হায়সামী বলেছেন, এর বর্ণনাকারীগণ বুখারীর বর্ণনাকারী। [মাজমুউয যাওয়ায়েদ: ১০/১৬৯]
ইমাম বুখারী বর্ণনা করেছেন, আবু হুরায়রাহ রাযি আল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত তিনি বলেন,, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “যখন কুরান পাঠকারী (ইমাম) আমিন বলে, তখন তোমরাও আমিন বলো। যার আমিন বলা ফেরেশতাদের আমিন বলার সাথে হয়, তার পূর্বের গুনাহ ক্ষমা করা হয়।” [সহীহুল বুখারী হাদিস নম্বর: ৬৪০২]