ইসলাম ডেস্ক।। প্রচলিত মিলাদের প্রবর্তক হলেন, ইরাকের মুসল নগরীর শাসন কর্তা মুজ্জাফ্ফর উদ্দিন কুকুরী। মূলত তার নির্দেশে আবুল খাত্তাব উমর নামক জনৈক আলেম ৬০৪ সালে এর প্রচলন করেন। ইনি ইবনে দাহিয়া নামে সমধিক পরিচিত। এদের চরিত্র তেমন ভালো ছিল না। সুলতান মুজাফফর ছিলেন একজন অপবায়ী শাসক। রাষ্ট্রীয় অর্থ তিনি সীমাহীনভাবে খরচ করতেন। এই মিলাদ অনুষ্ঠান এর প্রসার ও প্রচলনে অঢেল অর্থ খরচ করতেন।
এ ব্যাপারে ঐতিহাসিক যাহাবী বলেন তার মিলাদ মাহফিল কাহিনী ভাষায় ব্যক্ত করার মত নয়। মিলাদ অনুষ্ঠানের যোগ দেবার জন্য ইরাকের প্রত্যন্ত অঞ্চল হতে ও আলজিরিয়া হতে লোকের আগমন ঘটত । মিলাদের দিন তার ও তার স্ত্রীর জন্য সুরম্য কাঠের গম্ভুজকৃতির তাবু তৈরী করা হত। সেখানে গান বাজনা ও খেলা ধুলার আসর জমত। মুজাফফর প্রতাহ আসরের পরে সেখানে আসতেন এবং অনুষ্ঠান উপভোগ করতেন। অনুষ্ঠান কয়েক দিন যাবত চলত। অসংখ পশু জবাই করে আগত ব্যক্তিদের আহারের ব্যবস্থা হত। তিনি এ উপলক্ষে তিন লাখ দিনার বাজেট পেশ করতেন। ফকির দরবেশদের জন্য দু লাখ এবং অতিথিদের জন্য এক লাখ দিনার।
একজন প্রতাক্ষদর্শী বর্ণনা করেন, আমি দস্তরখানায় বিশেষ প্রজাতির একশত ঘোড়া, পাচ হাজার বকরীর মাথা, দশ হাজার মুরগি, এক লাখ গামলা, এবং তিন হাজার হালুয়ার পাত্র গণনা করেছি। এরপর ইমাম যাহাবী বলেন বিষয়টি আমার কাছে অবিশ্বাস বলে মনে হয়। কারণ এর দশ ভাগের এক ভাগও এর বেশি। এ ব্যাপারে ইমাম আহমদ বিন মোহাম্মদ মিসরী বলেন তিনি বাদশা ছিলেন। সমকালীন উলামাদেরকে তিনি স স ইজতেহাদ অনুযায়ী আমল করার নির্দেশ দিতেন। ইমামদের অনুসরণ করতে নিষেধ করতেন। ফলে এক শ্রেনীর আলেম সেদিকে ঝুকে পড়ে। তিনি রবিউল আওয়াল মাসে মিলাদ শরীফের আয়োজন করতেন। তিনিই প্রথম বাদশা যিনি মিলাদের প্রবর্তন করেন। (আল মিনহাজুল ওয়াজিহ ১৬২)
অতএব বুঝা গেল, প্রচলিত মিলাদের প্রবর্তক বাদশা মুজাফফর ইসলামী বিধি বিধানের গুরুত্ব দিতেন না। গান বাজনায় লিপ্ত হতেন। ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য রাষ্ট্রীয় অর্থ খরচ করে মিলাদের আয়োজন করতেন। আলেমদেরকে প্রলোভন দিয়ে ইচ্ছা মত ব্যবহার করতেন।
অন্য দিকে যে আলেম প্রচলিত মিলাদ প্রবর্তনে সাহায্য করেন তার নাম মাজদুদ্দিন আবুল খাত্তাব উমার বিন হাসান বিন আলী বিন জমায়েল। তিনি নিজেকে সাহাবী দাহেয়াতুল কালবি এর বংশধর বলে দাবি করেন। অথচ তা ছিল মিথ্যা দাবি। কারণ দাহেয়াতুল কালবি (রা.) কোনো উত্তরসুরী ছিল না। তাছাড়া তার বন্গ্সধারায় মধ্যস্তন পূর্বপুরুষরা ধংসের মধ্যে নিপাপিত হয়েছিল। তারপরেও তার বর্ণিত বংশ ধারায় অনেক পুরুষের উল্লেখ নাই। (মিজানুল ইতিদাল (১/১৮৬) এই সরকারি দরবারী আলেম একটি পুস্তক রচনা করেন।
এই পুস্তকে মিলাদের রূপরেখা বর্ণনা করা হয়। ৬০৪ হিজরীতে শাসক মুজাফ্ফারকে পুস্তকটি উপহার দেন। এতে তিনি খুশি হয়ে তাকে দশ হাজার দিনার বখশিশ দেন। আর সে বছর হতেই তিনি মিলাদুন্নবী পালন করতে শুরু করেন। (টিকা সিয়ারু আলা মিন্নুবালা ১৫/২৭৪)
মিলাদ প্রথা আবিস্কারের পরে সে সময়ের মানুষ বছরে একটি দিনে (১২ রবিউল আউয়াল) তা পালন করত এবং তা কয়েকদিন ধরে চলত। পরবতিতে ভক্তরা এটাকে সওয়াবের কাজ মনে করে বছরের বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন উপলক্ষে পালন করতে শুরু করে। আগে বড় ধরনের মাহফিলের আয়জন করা হত। বর্তমান মনগড়া কিছু দুরুদ ও গজল গেয়ে শেষ করা হয়। কয়েকটি কারণে মিলাদুন্নাবি বিদআত তা হল-
১. মহানবীর (সাঃ) জন্মদিন পালন করা যা বিজাতীয় সংস্কৃতি। যেমন হিন্দুরা শ্রী কৃষ্ণের, খৃষ্টনরা ঈসা (আঃ) জন্মদিন পালন করে।
২. রবিউল আউয়াল মাসের ১২ তারিখ তার জন্য নির্ধারিত করা।
৩. দুরুদ পাঠের জন্য নিদিষ্ট করা।
৪. হুজুরের আত্না উক্ত অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়েছে মনে করে দাঁড়ানো।
প্রচলিত মিলাদের সাথে আর একটি প্রথা সংযোজিত হয়েছে। তা হল রাসুল (সা) এর সম্মানাথে দাঁড়ান। এটি মৌলিক বিদ’আতের অন্তভুক্ত। সম্পুন অপ্রাসাংগিক একটি বিষয় মিলাদের সাথে জুড়ে দেয়া হয়েছে। এটি মিলাদের পরে আবিষ্কৃত হয়েছে।
৭৫১ হিজরির কথা। খাজা তকিউদ্দিন ছিলেন একজন ভাব কবি ও মাজযুব (ভাবাবেগে উদ্দেলিত) ব্যক্তি। মহানাবী (সা) এর নামে তিনি বিভিন্ন কাসিদা রচনা করেন। বরাবরের ন্যায় একদিন তিনি কাসিদা পাঠ করছিলেন। বসা থেকে ভাবাবেগে হঠাৎ তিনি দাঁড়িয়ে কাসিদা পাঠ করতে থাকলেন। ভক্তরাও তার দেখা দেখি দাঁড়িয়ে গেল। বাস, ঘটনা এখানেই শেষ। তিনি আর কখনো এমনটি করেননি।
এখানে একটা বিষয় লক্ষনীয় যে, খাজা তকিউদ্দিন কবিতা পাঠ করতে করতে দাঁড়িয়ে গিয়েছিলেন। এটি কোন মিলাদের অনুষ্ঠান ছিল না। তিনি অনিচ্ছাকৃত দাঁড়িয়ে পড়েছিলেন। কিন্তু মিলাদের জন্মের একশত বছর পরে বিদআতপন্থীরা এটিকে মিলাদের সাথে জুড়ে দেয়। ফলে কিয়াম বিশিষ্ট মিলাদ বিদআত হওয়ার বিষয়টি আরো স্পষ্ট হয়ে উঠে।