জান্নাতে যাবে যারা

ইসলাম ডেস্ক।। কোরআনের বিধান অনুযায়ী কেবল ইমানদাররা জান্নাতে যাবেন। আর কাফিররা বা যারা ইমান আনেননি তারা চিরকাল জাহান্নামে থাকবেন। এটা আল্লাহতায়ালার মৌলিক নীতি। কিন্তু এমন কিছু ইমানদার রয়েছেন, যারা মুসলমান হওয়ার কারণে জান্নাতে যাবেন। তবে এর আগে জাহান্নাম থেকে পাপের শাস্তি ভোগ করে আসবেন।

হাশরের ময়দানে মানুষ তিনটি অবস্থায় উত্থিত হবে। ১. একদল বাহনে করে, ২. একদল পদব্রজে, ৩. একদল মাথায় হেঁটে।

মহানবী (সা.) বলেন, ‘অবশ্যই মানুষ তিনটি দলে বিভক্ত হবে। একদল আরোহী স্বাদগ্রহণকারী ও সম্মানী। আরেকদল রয়েছে, যাদের ফেরেশতারা চেহারায় হাঁটিয়ে দোজখে নিয়ে যাবেন, আরেকদল পদব্রজে হাশরে উত্থিত হবে।’ (নাসায়ি, মিশকাত, পৃষ্ঠা ৪৮৪)

জান্নাতের ব্যাপক পরিচিতি সম্পর্কে সংক্ষেপে এক বর্ণনায় আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেছেন, ‘কেউ জানে না তার জন্য কৃতকর্মের কি কি নয়নাভিরাম বিনিময় লুকায়িত (সংরক্ষিত) আছে।’ (সুরা সাজদাহ, আয়াত : ১৭)

আল্লাহতায়ালা আরও ইরশাদ করেছেন, ‘কেউ আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের আনুগত্য করলে, আল্লাহ তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। (এমন জান্নাত) যার তলদেশে নদীনালা প্রবাহিত। সেখানে তারা চিরকাল থাকবে। আর এটাই মহাসাফল্য। (সুরা নিসা, আয়াত : ১৩)

কিয়ামতের দিন হবে বিভীষিকাময়। সেদিন কেউ কারো হবে না। প্রত্যেকে ‘ইয়া নাফসি, ইয়া নাফসি’ বলে চিন্তিত হবে। পবিত্র কোরআনে এই  এসেছে, ‘সেদিন মানুষ নিজের ভাই, নিজের মা, নিজের পিতা, নিজের স্ত্রী ও সন্তানাদি থেকে পালাবে। তাদের মধ্যে প্রত্যেক ব্যক্তির ওপর সেদিন এমন সময় এসে পড়বে, সে নিজেকে ছাড়া আর কারো প্রতি লক্ষ করার মতো অবস্থা থাকবে না।’ (সুরা : আবাসা, আয়াত : ৩৪-৩৭)

যদি তারা কখনো কোনো অশ্লীল কাজ করে কিংবা নিজের ওপর জুলুম করে, তখন তারা আল্লাহকে স্মরণ করে এবং নিজেদের পাপের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে। আল্লাহ ছাড়া আর কে পাপ ক্ষমা করবেন? তারা নিজের কৃত কর্মের জন্য হঠকারিতা প্রদর্শন করে না এবং জেনেশুনে তার পুনরাবৃত্তি করে না। (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ১৩৫)

‘এগুলো আল্লাহর নির্ধারিত সীমা। যে ব্যক্তি আল্লাহর ও তাঁর রাসুলের আদেশমতো চলে, তিনি তাকে জান্নাতসমূহে প্রবেশ করাবেন, যেগুলোর তলদেশ দিয়ে নদী প্রবাহিত হবে। তারা সেখানে চিরকাল থাকবে। এটা বিরাট সাফল্য…।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ১৩-১৪)

‘আর যারা ঈমান আনে এবং সৎকর্ম করে, অবশ্যই আমি তাদের প্রবিষ্ট করাব জান্নাতে, যার তলদেশে প্রবাহিত রয়েছে নহরসমূহ। সেখানে তারা থাকবে অনন্তকাল। সেখানে তাদের জন্য থাকবে পবিত্র স্ত্রী এবং তাদের আমি প্রবিষ্ট করাব ঘন ছায়ানীড়ে। (সুরা : নিসা, আয়াত : ৫৭)

‘তবে তারা স্বতন্ত্র, যারা নামাজ আদায়কারী। যারা তাদের নামাজে সার্বক্ষণিক কায়েম থাকে। এবং যাদের ধন-সম্পদে নির্ধারিত হক আছে যাচ্ঞাকারী ও বঞ্চিতের এবং যারা প্রতিফল দিবসকে সত্য বলে বিশ্বাস করে। এবং নিশ্চয়ই তাদের পালনকর্তার শাস্তি থেকে নিঃশঙ্ক থাকা যায় না। এবং যারা তাদের যৌন অঙ্গকে সংযত রাখে। কিন্তু তাদের স্ত্রী অথবা মালিকানাভুক্ত দাসীদের বেলায় তিরস্কৃত হবে না, অতএব যারা এদের ছাড়া অন্যকে কামনা করে তারাই সীমা লঙ্ঘনকারী। এবং যারা তাদের আমানত ও অঙ্গীকার রক্ষা করে এবং যারা তাদের সাক্ষ্যদানে নিষ্ঠাবান এবং যারা তাদের নামাজে যত্নবান তারাই জান্নাতে সম্মানিত হবে।’ (সুরা : আল-মাআরিজ, আয়াত : ২২-৩৫)

‘নিশ্চয়ই খোদাভীরুরা থাকবে ছায়ায় ও প্রস্রবণসমূহে এবং তাদের বাঞ্ছিত ফলমূলের মধ্যে। বলা হবে, তোমরা যা করতে তার বিনিময় তৃপ্তির সঙ্গে পানাহার করো। এভাবেই আমি সৎকর্মশীলদের পুরস্কৃত করে থাকি।’ (সুরা : মুরসালাত, আয়াত : ৪১-৪৪)

‘নিশ্চয়ই মুসলমান পুরুষ, মুসলমান নারী, ঈমানদার পুরুষ, ঈমানদার নারী, অনুগত পুরুষ, অনুগত নারী, সত্যবাদী পুরুষ, সত্যবাদী নারী, ধৈর্যশীল পুরুষ, ধৈর্যশীল নারী, বিনীত পুরুষ, বিনীত নারী, দানশীল পুরুষ, দানশীল নারী, রোজা পালনকারী পুরুষ, রোজা পালনকারী নারী, লজ্জাস্থান হেফাজতকারী পুরুষ, লজ্জাস্থান হেফাজতকারী নারী—তাদের জন্য আল্লাহ প্রস্তুত রেখেছেন ক্ষমা ও মহাপুরস্কার।’ (সুরা : আহজাব, আয়াত : ৩৫)

‘আল্লাহ ক্রয় করে নিয়েছেন মুসলমানদের থেকে তাদের জীবন ও সম্পদ। এর বিনিময়ে তাদের জন্য রয়েছে জান্নাত। তারা যুদ্ধ করে আল্লাহর পথে, অতঃপর মারে ও মরে। তাওরাত, ইনজিন ও কোরআনে এ বিষয়ে তাদের দৃঢ় প্রতিশ্রুতি রয়েছে। আর আল্লাহর চেয়ে প্রতিশ্রুতি রক্ষায় কে শ্রেষ্ঠ? সুতরাং তোমরা আনন্দিত হও সে লেনদেনের ওপর, যা তোমরা করছ তাঁর সঙ্গে। আর এ হলো মহান সাফল্য। তারা তাওবাকারী, ইবাদতকারী, শোকরগোজার, সিয়াম পালনকারী, রুকু ও সিজদা আদায়কারী, সৎকাজের আদেশ দানকারী ও মন্দ কাজ থেকে নিবৃত্তকারী এবং আল্লাহর দেওয়া সীমাসমূহের হেফাজতকারী। সুসংবাদ দাও ঈমানদারদের।’ (সুরা : তাওবা, আয়াত : ১১১-১১২)

আমি সর্বপ্রথম জান্নাতের দরজায় করাঘাত করব। …আমিই জান্নাতে প্রথম সুপারিশকারী হব।’ তিনি আরো বলেন, ‘আমি জান্নাতের নিকট এসে তার দরজা খুলতে বলব। দারোয়ান ফিরিশ্‌তা বলবেন, কে আপনি? আমি বলব, ‘মুহাম্মাদ। দারোয়ান বলবেন, আমি আদিষ্ট হয়েছি, যেন আপনার পূর্বে অন্য কারো জন্য দরজা না খুলি। (মুসলিম, হাদিস : ১৯৭)

রাসুল (সা.) আরও বলেন, ‘আমরা (দুনিয়ায়) সর্বশেষে এসেছি, সর্বপ্রথম কিয়ামতে (আখেরাতে) উপস্থিত হব এবং আমরাই সর্বপ্রথম জান্নাতে প্রবেশ করব।’ (বুখারি, হাদিস : ২৩৮; মুসলিম, হাদিস : ৮৫৫)

উম্মতে মুহাম্মদির মধ্যে সর্বপ্রথম জান্নাতে প্রবেশ করবেন আবু বকর (রা.)। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল বলেন, ‘জিবরাইল এসে আমার হাত ধরে জান্নাতের দরজা দেখাল, যে দরজা দিয়ে আমার উম্মত জান্নাতে প্রবেশ করবে। তখন আবু বকর (রা.) বললেন, হে আল্লাহর রাসুল, আমিও আপনার সঙ্গে থাকব যেন জান্নাতের দরজা দেখতে পারি। তখন রাসুল (সা.) বললেন, ‘হে আবু বকর, শুনে রাখো, আমার উম্মাতের মধ্যে সর্বপ্রথম তুমি জান্নাতে প্রবেশ করবে।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৬৫২)

আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘যেদিন আল্লাহর রহমতের ছায়া ছাড়া অন্য কোনো ছায়া থাকবে না, সেদিন আল্লাহ তাআলা সাত ধরনের মানুষকে তাঁর আরশের ছায়ায় আশ্রয় দেবেন—১. ন্যায়পরায়ণ শাসক। ২. যে যৌবনে আল্লাহর ইবাদতে লিপ্ত থাকে। ৩. যার অন্তর সর্বদা মসজিদের সঙ্গে লেগে থাকে। ৪. ওই ব্যক্তি, যারা আল্লাহর উদ্দেশে পরস্পরকে ভালোবাসে এবং আল্লাহর জন্যই পরস্পর একত্র হয় এবং তাঁর জন্যই সম্পর্ক ছিন্ন করে। ৫. ওই ব্যক্তি, যাকে কোনো বংশীয়ভাবে মর্যাদাবান রূপসী নারী কুকর্মের প্রতি আহ্বান জানায়; কিন্তু সে এ কথা বলে তা প্রত্যাখ্যান করে যে আমি আল্লাহকে ভয় করি। ৬. যে ব্যক্তি এমন গোপনে দান-সদকা করে যে তার ডান হাতে কী দান করেছে, বাম হাত তা জানে না। ৭. যে ব্যক্তি নির্জনে আল্লাহকে স্মরণ করে এবং তাঁর ভয়ে চক্ষুদ্বয় থেকে অশ্রু ঝরে।’ (বুখারি, হাদিস : ৬৬০ মুসলিম, হাদিস : ১০৩১) 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *