ইসলাম ডেস্ক।। মানুষ সামাজিক জীব। একাকী বসবাস করতে পারে না। প্রতিবেশীর সঙ্গে সৌহার্দ্যপূর্ণ, আন্তরিক ও সহানুভূতিশীল আচরণের মধ্য দিয়েই তাকে বাঁচতে হয়। এ জন্য প্রতিবেশীর অধিকার ও মর্যাদার প্রতি ইসলামে অত্যন্ত গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।
পবিত্র কুরআনে মহান রাব্বুল আলামিন বলেন, মা-বাবার সঙ্গে সৌহার্দ পূর্ণ আচরণ করো। আত্মীয়-স্বজন, ইয়াতিম এবং মিসকিনদের সঙ্গে সদাচার করো। সদ্ব্যবহার করো পরিচিত অপরিচিত প্রতিবেশী ও সাময়িক প্রতিবেশী এবং মুসাফিরদের সঙ্গে। (সুরা নীসা: ৩৬)
রাসুল (সাঃ) বলেছেন, যে ব্যাক্তি আল্লাহ ও আখেরাতের প্রতি ঈমান রাখে সে যেন প্রতিবেশীকে কষ্ট না দেয় (সহীহ মুসলিম, হাদীস : ১৮৩)
প্রিয়নবী (সা.) বলেন, জিবরাঈল (আ.) আমাকে প্রতিবেশীর হক সম্পর্কে এত বেশি তাগিদ করতেন যে এক পর্যায়ে আমার মনে হয়েছে হয়তো অচিরেই প্রতিবেশীকে উত্তরাধিকারী সাব্যস্ত করা হবে। (বোখারী : ২/৮৮৯)
প্রতিবেশী কেবল তারাই নয়, যারা নিজ বাড়ির একান্ত আশেপাশে বসবাস করে। এর সীমারেখা আরও বিস্তৃত। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত রাসুল (সা.) বলেন, তোমাদের ডানে-বামে, সামনে-পেছনে চল্লিশটি বাড়ি পর্যন্ত প্রতিবেশীর আওতার অন্তর্ভুক্ত। (বোখারি: /২৯০১)
এ বিষয়টি মহানবী (সা.)- এর বাণীতে উচ্চারিত হয়েছে এভাবে, ‘সে ব্যক্তি মুমিন নয় যে রাত যাপন করলো পরিতৃপ্ত অবস্থায় অথচ তার পাশে তার প্রতিবেশী ক্ষুধার্ত এবং সে তা জানে।’ (তহাবী শরীফ: ১/২৫)
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত রাসুল (সা.) বলেন, আল্লাহর কসম, ঐ ব্যক্তি মুমিন নয়; আল্লাহর কসম, ঐ ব্যক্তি মুমিন নয়; আল্লাহর কসম, ঐ ব্যক্তি মুমিন নয়। উপস্থিত সাহাবায়ে কিরাম জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ কোন ব্যক্তি মুমিন নয়? প্রতি উত্তরে তিনি বললেন, যার প্রতিবেশী তার অনিষ্ট থেকে নিরাপদ নয়।’ (বোখারী: ২/৮৮৯)
হজরত মুজাহিদ (রহ.) থেকে বর্ণিত, একদা আবদুল্লাহ ইবনে অমরের জন্য একটি বকরী জবাই করা হলো। তিনি ঘরে এসে বলতে লাগলেন, ‘তোমরা কি আমাদের ইহুদী প্রতিবেশীর জন্য গোশত হাদিয়া পাঠিয়েছো’? আমি রসুলুল্লাহ (সা.)- কে বলতে শুনেছি, ‘হযরত জিবরাঈল আমাকে প্রতিবেশীর হক সম্পর্কে এতবেশি তাগীদ করতেন যে, এক পর্যায়ে আমার মনে হয়েছে, হয়তো অচিরেই প্রতিবেশীকে উত্তরাধিকার বানিয়ে দেয়া হবে।’ (তিরমিজি: ২/২৪)
এক প্রতিবেশী আরেক প্রতিবেশীকে হাদিয়া দেওয়ার বিষয়টি এত গুরুত্বপূর্ণ যে, সামান্য জিনিস হাদিয়া দিতেও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের উদ্বুদ্ধ করেছেন। এক হাদীসে আছে, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত আবু যর রা.- কে বলেন, হে আবু যর, তুমি ঝোল (তরকারি) রান্না করলে তার ঝোল বাড়িয়ে দিও এবং তোমার প্রতিবেশীকে তাতে শরিক করো। (সহীহ মুসলিম,হাদীস ২৬২৫)