কিছুটা শিথিল হলো কিন্ডারগার্টেন নিবন্ধনের শর্ত

নিজস্ব প্রতিনিধি:

বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় বা কিন্ডারগার্টেন স্কুল নিবন্ধনে জমি সংক্রান্ত শর্ত কিছুটা শিথিল করেছে সরকার।

দাবি মেনে বিধিমালা সংশোধন করার জন্য শিক্ষকরা সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তাদের জন্য সরকারি বেতন-ভাতার ব্যবস্থা করার দাবিও জানিয়েছেন।

আগে মহানগর এলাকার বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় বা কিন্ডারগার্টেন নিবন্ধনে নূন্যতম ৮ শতাংশ জমি থাকার শর্ত থাকলেও তা ৩ শতাংশ করা হয়েছে।

আর পৌরসভা এলাকার স্কুলের নিবন্ধনে ১২ শতাংশ জমি থাকার শর্ত শিথিল করে ৫ শতাংশ করা হয়েছে।

তবে মহানগর ও পৌরসভা ছাড়া অন্যান্য এলাকার কিন্ডারগার্টেন স্কুল নিবন্ধনে ৩০ শতাংশ জমি থাকার শর্ত অপরিবর্তিত আছে। এছাড়া জমি না থাকলেও নিজস্ব বা ভাড়া করা ৩০০০ বর্গফুটের ভবন থাকলে নিবন্ধন নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়েছে।

এভাবেই বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নিবন্ধন বিধিমালা-২০২৩ সংশোধন করা হয়েছে। গত ২৫ মার্চ বিধিমালা সংশোধনের গেজেট প্রকাশ করেছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।

মন্ত্রণালয়ের বিদ্যালয় অধিশাখার অতিরিক্ত সচিব মাসুদ আকতার খান বলেন, “বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর শিক্ষকদের সংগঠনের দাবি অনুযায়ী বিধিমালা কিছু শর্ত শিথিল করা হয়েছে।”

প্রাথমিক পর্যায়ে পাঠদান করানো বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় বা কিন্ডারগার্টেন স্কুলগুলোর ওপর সরকারি তদরকি না থাকায় ২০২৩ সালের নভেম্বরে নিবন্ধনের শর্ত দিয়ে বিধিমালা জারি করে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।

ওই বিধিমালায় বলা ছিল, বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নিজস্ব মালিকানায় বা ভাড়ায় মেট্রোপলিটন এলাকায় অন্যূন ০.০৮ একর বা আট শতাংশ, পৌরসভা এলাকায় অন্যূন ০.১২ একর বা ১২ শতাংশ এবং অন্যান্য এলাকার জন্য অন্যূন ০.৩০ একর বা ত্রিশ শতাংশ ভূমি থাকতে হবে।

তবে গত ২৫ মার্চ প্রকাশিত বিধিমালার সংশোধনের গেজেটে বলা হয়েছে, বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নিজস্ব মালিকানায় বা ভাড়ায় মেট্রোপলিটন এলাকায় অন্যূন ০.০৩ একর (তিন শতাংশ), পৌরসভা এলাকায় অন্যূন ০.০৫ একর (পাঁচ শতাংশ) এবং অন্যান্য এলাকার জন্য অন্যূন ০.৩০ একর (ত্রিশ শতাংশ) ভূমি থাকতে হবে অথবা নিজস্ব মালিকানায় বা ভাড়ায় অন্যূন ৩০০০ বর্গফুট পরিমাণের ভবন থাকতে হবে।

নভেম্বরে জারি করা নীতিমালায় বলা ছিল, উদ্যোক্তা বা প্রতিষ্ঠাতার ২ জন প্রতিনিধি, অভিভাবকদের ২ জন প্রতিনিধি, ১ জন শিক্ষক প্রতিনিধি, ও নিকটতম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে সদস্য ও সংশ্লিষ্ট স্কুলের প্রধান শিক্ষককে সদস্য সচিব করে ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন করতে হবে। সংশ্লিষ্ট স্কুলের প্রধান শিক্ষক ও শিক্ষক প্রতিনিধি ছাড়া অন্যান্যদের মধ্যে নির্বাচন করে সভাপতি ও একজন সহসভাপতি নির্বাচন করতে হবে।

তবে সংশোধনীতে ব্যবস্থাপনা কমিটি থেকে নিকটতম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের সদস্য পদ বিলুপ্ত করা হয়েছে।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ঐক্য পরিষদের সভাপতি এম ইকবাল বাহার চৌধুরী বলেন, “বিধিমালা সংশোধন করে শর্ত কিছুটা শিথিল করায় আমরা খুশি। সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই।

“আমরা এখন আলাদা একটি অধিদপ্তর গঠন করে এর অধীনে শিক্ষকদের নূন্যতম একটি বেতনভাতা দেওয়ার দাবি জানাই সরকারের কাছে। আশা করছি সরকার আমাদের কষ্ট অনুধাবন করে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেবে। আমরা শুনেছি সরকার ইতোমধ্যে আমাদের জন্য আলাদা অধিদপ্তর গঠনের উদ্যোগও নিয়েছে।”

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে প্রাথমিক পর্যায়ের পাঠদান করাচ্ছে ১ লাখ ১৪ হাজারের বেশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এগুলোর মধ্যে ৬৫ হাজার ৫৬৭টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। ৪৯ হাজারের বেশি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় চালু আছে। তবে এগুলোর সিংহভাগই নিবন্ধনের বাইরে রয়েছে।

বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নিবন্ধন বিধিমালা-২০২৩ অনুযায়ী, প্রাথমিক পর্যায়ে পাঠদান করানো কিন্ডারগার্টেন ও বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোকে নিবন্ধিত হতে হবে। তবে নিবন্ধিত হওয়ার আগে এ স্কুলগুলোকে নিতে হবে পাঠদানের অনুমতি।

ওই বিধিমালা অনুযায়ী, প্রতিষ্ঠানের অবস্থান ভেদে ২ থেকে ৫ হাজার টাকা ফি দিয়ে এ স্কুলগুলোকে এক বছরের জন্য পাঠদানের অনুমতি নিতে হবে। পাঠদানের অনুমতি পাওয়ার ১১ মাস ৩০ দিন পর কিন্ডারগার্টেন ও বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোকে নিবন্ধিত হওয়ার আবেদন করতে হবে।

নিবন্ধন নিতে কিন্ডারগার্টেন ও বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর অবস্থান ভেদে ফি ছিল ৮ থেকে ১৫ হাজার টাকা। নিবন্ধন বা নিবন্ধন সনদের মেয়াদ হবে ৫ বছর। নিবন্ধিত হওয়ার পাঁচ বছর পর নিবন্ধন ফিয়ের অর্ধেক টাকা দিয়ে প্রতিষ্ঠানগুলোকে পরের পাঁচ বছরের জন্য নিবন্ধন নবায়ন করতে হবে।

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ছাড়া প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠদান করানো নার্সারি, কিন্ডারগার্টেন, প্রিপাইটরি স্কুল, ইংরেজি ভার্সন স্কুল, অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং নিম্নমাধ্যমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্কুলের সংযুক্ত পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুলগুলোকে এ বিধিমালার আলোকে পাঠদানের অনুমতি নিয়ে নিবন্ধিত হতে বলা হয়েছিল বিধিমালায়।

বিধিমালা অনুসারে, প্রাথমিক পর্যায়ে পাঠদান করানো কিন্ডারগার্টেন ও বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কমপক্ষে ছয়জন শিক্ষক থাকতে হবে। তাদের কমিটির মাধ্যমে নিয়োগ দিতে হবে। কিন্ডারগার্টেনসহ এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগের যোগ্যতা হবে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মতো। বেসরকারি এ প্রতিষ্ঠানগুলোতে ছাত্র-শিক্ষক অনুপাত হবে ৩০:১।

নিয়োগ যোগ্যতা বেঁধে দেওয়া হলেও এ বিধিমালায় শিক্ষকদের বেতন কত হবে সে বিষয়ে কোনো শর্ত বা নির্দেশনা ছিল না।

মন্ত্রণালয় জানিয়েছিল, কিন্ডারগার্টেন ও বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বেতনের দায় সরকার বা অন্য কোনো কর্তৃপক্ষের ওপর বর্তাবে না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *