ঢাকা-লক্ষ্মীপুর মহাসড়ক জরাজীর্ণ’ ঝুঁকিতে চলছে যানবাহন

এস এম আওলাদ হোসেন, সিনিয়র রিপোর্টার।। লক্ষ্মীপুর: ঢাকা-লক্ষ্মীপুর-রায়পুর মহাসড়কটি জরাজীর্ণ অবস্থা হয়ে আছে। দীর্ঘদিন ধরে সড়কটি সংস্কার করা হয় না। ফলে সড়কের বেশির ভাগ অংশেই পিচ ও মেকাডম (ভাঙা ছোট পাথর/খোয়া বিছিয়ে পিচ ঢালাই) উঠে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এতে প্রতিদিন হাজার হাজার যানবাহন ঝুঁকি নিয়ে ‘হেলেদুলে’ চলাচল করছে। আধাঘণ্টার পথ পাড়ি দিতে লাগছে এক ঘণ্টারও বেশি সময়।

এছাড়া সড়কজুড়ে ধুলাবালির দাপটে অতিষ্ঠ জনসাধারণ। জেলার চন্দ্রগঞ্জ থেকে লক্ষ্মীপুর বাস টার্মিনাল পর্যন্ত মহাসড়কের দৈর্ঘ্য ১৮ কিলোমিটার এবং লক্ষ্মীপুর থেকে রায়পুর অংশে ১৪ কিলোমিটার, আর রায়পুর থেকে রায়পুর-ফরিদগঞ্জের বর্ডার বাজার অংশে প্রায় সাত কিলোমিটার।

সরেজমিনে মহাসড়কের চন্দ্রগঞ্জ পশ্চিম বাজার থেকে রায়পুর বর্ডার বাজার পর্যন্ত বেহাল দশা দেখা যায়।

বিশেষ করে চন্দ্রগঞ্জ বাজারের পশ্চিম থেকে শুরু করে হাজিরপাড়া বাজারের পূর্ব ও পশ্চিম অংশ, বটতলী বাজারের পশ্চিম অংশ থেকে মান্দারী বাজার হয়ে যাদৈয়া মাদরাসা, জকসিন বাজার থেকে শুরু করে তেলের পাম্প, পুলিশ লাইন্স, ইসলাম মার্কেট, পলোয়ান মসজিদ, ঝুমুর, বাগবাড়ি, উত্তর তেমুহনী, বিসিক ও বাস টার্মিনাল এলাকার অবস্থা একেবারে নাজুক।

এছাড়া লক্ষ্মীপুর-রায়পুর অংশে নতুন গরুহাটা, বেড়িরমাথা, দালাল বাজারের উত্তর অংশ, মাইলের মাথা, সর্দার বাড়ি, রায়পুরের বাসাবাড়ি থেকে রাখালিয়া, ফিশারিজ ব্রিজ থেকে শুরু করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পর্যন্ত সড়ক ভাঙা।

রায়পুর উপজেলা প্রশাসন শিশুপার্ক সংলগ্ন থেকে শুরু করে রায়পুর-ফরিদগঞ্জ বর্ডার বাজার পর্যন্ত সড়কের অবস্থা একেবারে শোচনীয়।

এদিকে নাজুক এ সড়কে লক্ষ্মীপুর সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ থেকে স্থায়ীভাবে সংস্কার করা না হলেও পিচ ঢালাই কার্পেটিংয়ের এ সড়কটি সংস্কার করা হচ্ছে ইট দিয়ে! গত কয়েকদিন ধরে সড়কের বিভিন্নস্থানে বসানো হয়েছে ইটের সলিং।

আর ইট বসানোর জন্য ব্যবহার হচ্ছে বালু। ফলে ধুলোর মাত্রা বেড়েছে কয়েকগুণ। দূষণ হচ্ছে পরিবেশ। ইটের সলিং দিয়ে সংস্কারের কারণে হাস্যরসের সৃষ্টি হয়েছে সাধারণ চলাচলকারীদের মাঝে।

বিষয়টিকে ‘তামাশাও’ বলছেন কেউ কেউ। মহাসড়কে ইটের সলিং না করে স্থায়ীভাবে সংস্কারের দাবি স্থানীয়দের। যদিও মহাসড়কটি চার লেনে উন্নীত করার জন্য প্রকল্প প্রস্তাবনা দিয়ে রেখেছে সওজ বিভাগ। প্রকল্প পাস হলে উন্নয়ন হবে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা।

তবে সেটিও বা কবে নাগাদ হবে তার সদুত্তর মেলেনি সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে। লক্ষ্মীপুর জেলার একমাত্র গুরুত্বপূর্ণ এ সড়কটি দিয়ে ঢাকা এবং চট্টগ্রাম থেকে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের বেশকিছু জেলার যাত্রীবাহী বাস ও ও মালবাহী ট্রাক-পিকআপভ্যান চলাচল করে।

স্থানীয়রা জানান, কার্পেটিং করার কয়েক বছরের মাথায় সড়কের বিভিন্ন স্থানে খানাখন্দ দেখা দিলে ‘জোড়াতালি’ দিয়ে ওইসব অংশ নামমাত্র সংস্কার করা হতো। তবে স্থায়ীভাবে সংস্কার না হওয়ায় কয়েক মাসের মাথায় পিচ ঢালাই উঠে যেত।

সংশ্লিষ্ট সূত্র ও সরেজমিন পরিদর্শন ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সর্বশেষ ২০১৭ সালের দিকে ঢাকা-লক্ষ্মীপুর-রায়পুর মহাসড়কটিতে কার্পেটিং এর কাজ করা হয়।

এরপর থেকে আর কোনো কাজ হয়নি। এদিকে সড়কে যানবাহনের চাপ, অন্যদিকে অতিবৃষ্টিতে সড়কের পুরো এলাকায় ফাটল দেখা দিয়েছে। এরপর বেশ কয়েকটি স্থানে দেখা দিয়েছে বড় বড় গর্ত। কণা ও বালু দিয়ে সেসব গর্ত ভরাটের ‘বৃথা’ চেষ্টা করা হয়।

আবার কোথাও কোথাও কার্পেটিং সংস্কারের নামে অপচয় করা হচ্ছে অর্থ। কোনোটাই কাজে আসেনি। বছর খানেক আগেও সড়কের হাজিরপাড়া, মান্দারী, জকসিন, পুলিশ লাইন্স সংলগ্ন এলাকায় পিচ ঢালাই কার্পেটিং করা হয়েছে।

কিন্তু তা বেশিদিন টেকেনি। ওইসব স্থানে এখন বসানো হচ্ছে ইটের সলিং। জরাজীর্ণ এ সড়ক চলাচল করতে একদিকে যেমন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে, অন্যদিকে বালুতে অতিষ্ঠ হচ্ছে চলাচলকারী যাত্রী এবং আশপাশের লোকজন।

মাহমুদুল হাসান নামে একজন ব্যাংক কর্মকর্তা বলেন, কর্মক্ষেত্রে যেতে প্রতিদিন এ সড়ক দিয়ে পৌর এলাকা থেকে মান্দারী বাজার পর্যন্ত দুবার যাতায়াত করতে হয়।

এমনিতেই সড়ক বালুময়। এরপর বালু দিয়ে ইটের সলিং করা হচ্ছে। এতে ধুলোবালির পরিমাণ আরও বেড়েছে। ফলে আমাদের ভোগান্তি কিন্তু কমেনি, বরং বেড়েছে। বালুর কারণে পরনের জামাকাপড় নষ্ট হয়। ধুলোতে শ্বাস নেওয়া যায় না। এটা স্বাস্থ্যের জন্যেও মারাত্মক ক্ষতিকর।

জরাজীর্ণ সড়কের কারণে যাতায়াতে সময়ও অপচয় হচ্ছে। পৌরসভার ইসলাম মার্কেট এলাকার বাসিন্দা আবদুল মতিন বলেন, পিচ ঢালাই সড়কে ইটের সলিং দেখে মনে হয় এটা একটা ‘তামাশা’। গুরুত্বপূর্ণ এ সড়কটি সংস্কার করতে হবে দীর্ঘস্থায়ীভাবে। কিন্তু সংশ্লিষ্টরা ইট বসিয়ে দিচ্ছে। এখানেও তাদের অনিয়ম আছে।

তিনি বলেন, ইটের সলিংয়ের কারণে দুর্ভোগ আরও বাড়বে। এ সড়কে ভারী যানবাহন চলাচল করে। যানবাহনের চাকায় ইট ভেঙে ধুলো উড়বে, আবারও সেই গর্তের সৃষ্টি হবে।

এটা সড়ক বিভাগের খামখেয়ালিপনা। জয়লান আবেদীন নামে একজন চলাচলকারী যাত্রী বলেন, নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ চৌরাস্তা থেকে লক্ষ্মীপুর পর্যন্ত মহাসড়কের অবস্থা খুবই খারাপ ছিল। কিন্তু বন্যা পরবর্তী সময়ে বেগমগঞ্জ চৌরাস্তা থেকে চন্দ্রগঞ্জ পশ্চিম বাজার পর্যন্ত নোয়াখালী অংশে সড়ক সংস্কার করা হয়েছে। কিন্তু লক্ষ্মীপুর অংশে কোনো সংস্কার হয়নি।

এটা লক্ষ্মীপুর বাসীর জন্য দুর্ভাগ্য। রায়পুর উপজেলার বাসিন্দা ও সংবাদকর্মী ওয়াহিদুর রহমান মুরাদ বলেন, লক্ষ্মীপুর থেকে রায়পুর হয়ে বর্ডার বাজার পর্যন্ত সড়কের বিভিন্ন স্থানে নাজুক অবস্থা। রাস্তা ফেটে গেছে, গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া রাস্তার দুপাশে হাঁটার মতো জায়গা নেই, মাটি সরে গেছে। এতে চলাচলকারীদের জন্য একেবারে ঝুঁকিপূর্ণ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *