বিকাশ রায় চৌধুরী, সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার।। পল্লী কবি জসীম উদ্দীন গ্রাম বাংলার অসহায় মানুষের চিত্র তুলে ধরেছিলেন ‘আসমানী’ কবিতায়। আধুনিক যুগে ভেন্না পাতার প্রচলন না থাকলেও ঠাকুরগাঁওয়ে প্লাস্টিকের ছানি দেওয়া ছাপরার মধ্যেই ১০ বছর ধরে রাস্তার ধারে কষ্টের জীবন কাটাচ্ছে ৭৩ বছর বয়সী শাহাজ উদ্দিন ও তার পরিবার।
সদর উপজেলা ভূমিহীন মুক্ত ঘোষণা করা হলেও তাদের ভাগ্যে জোটেনি খাস জমি বা আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর। ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার বড় খোঁচাবাড়ী বাজারের অদূরে ঠাকুরগাঁও-দিনাজপুর মহা সড়কের পাশে রাস্তার ধারে এক খণ্ড জমিতে পলিথিন আর কাপর দিয়ে মোড়ানো খুপরি ঘর বানিয়ে বসবাস করছেন তিনি।
শাহাজ উদ্দিনের সংসারে রয়েছে দুই সন্তান। বড় মেয়ে শারমিন আক্তার(১২) স্থানীয় নূরানী মাদ্রাসার শিক্ষার্থী। ছোট ছেলে আসাদুজ্জামানের বয়স ৮ বছর।
নিজের কষ্টের কথা বলতে গিয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে শাহাজ উদ্দিন বলেন, বেঁচে থাকা আমার কাছে শুধুই যন্ত্রণা মাত্র। স্ত্রী হৃদরোগে ৫ বছর আগে মারা যায়। এক ছেলে এক মেয়ে নিয়ে রাস্তার ধারে খুপরি ঘরে ঝড় বৃষ্টির মধ্যে অনেক কষ্ট কইরা দিন কাটাইতেছি।
তিনি আরও জানান, সারাদিন রাস্তার ধারে ইট পাথর কুড়ান। তারপর সেগুলো দিয়ে স্যানিটারি রিং তৈরি করে বিক্রি করেন। কখনও রিং বিক্রি করে খাবার জোটে, কখনো বা সেটুকুও না জুটলে দুই সন্তান নিয়ে না খেয়ে থাকেন।
শাহাজ উদ্দিনের ঝুপড়ির ঘরে গিয়ে দেখা যায়, একটি পাতলা কম্বল, প্লাস্টিকের বস্তা আর একটি পাটি তার সম্বল। রান্না করেন খোলা আকাশের নিচে। ঝড়-বৃষ্টি হলে রান্না করা খু্ব কঠিন হয়ে যায় তার জন্য।
শত কষ্টের মাঝে এভাবেই মানবেতর জীবনযাপন করছেন তিনি। খুব ঠান্ডা তাই মাটিতে গাছের পাতা বিছিয়ে কম্বল মুড়িয়ে আছে ৮ বছর বয়সী শিশু আসাদুজ্জামান। তাকে জিজ্ঞেস করলে শিশুটি জানায়, ঠান্ডায় ঘুম আসে না।
রাত ভর ঘরের ফাঁক ফোকর দিয়ে কুয়াশার মত বৃষ্টি পরে। মায়ের কথা জিজ্ঞেস করলে বলে, মা অনেক আগে মারা গেছে।
মেয়ে শারমিন আক্তার জানায়, রাতে এখানে ঘুমাতে তার অনেক কষ্ট হয়। ঝড়-বৃষ্টি এলে ভয় করে। যে কোনো সময় ঝড়ে ঘর ভেঙে আমাদের গায়ে পড়তে পারে। যাওয়ার মত আমাদের কোন জায়গা নেই, তাই ভয় ও আতঙ্ক নিয়ে থাকতে হয়।
প্রতিবেশীরা জানান, ব্যক্তিগত জীবনে বৃদ্ধ শাহাজ উদ্দিনের সহায় সম্বল বলতে কিছুই নেই। এই দুঃখী বৃদ্ধ ভূমিহীন হওয়ার পরও তার ভাগ্যে জোটেনি একটি থাকার ঘর। বিত্তশালী কিংবা প্রশাসন থেকেও কেউ তাঁর খোঁজ পর্যন্ত নেয়নি।
সদর উপজেলা প্রশাসন যেন বৃদ্ধ শাহজাদকে আশ্রয়ন প্রকল্পের একটি সরকারি ঘর এবং দু’বেলা দু’মুঠো খাবারের ব্যবস্থা করে দেয়।
এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা সমাজসেবা অফিসার সারোয়ার মূর্শিদ আহমেদ বলেন, বৃদ্ধ শাহাজ উদ্দিনের বিষয়টি আগে আমার জানা ছিল না। আমি যতটুকু পারবো সহযোগিতা করবো।