ঈদে মিলাদুন্নবীর উৎপত্তি ?

ইসলাম ডেস্ক- মহানবী হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) এর মৃত্যুর ও অনেক পরে থেকে এই মিলাদুন্নবীর প্রচলনে ঘটে। মহানবী (সাঃ) এর জীবদ্দশায় ও সাহাবিদের সময়কালেও এই ঈদে মিলাদুন্ন নামে কোন কিছুই ছিল না। মহানবী হযরত মোহাম্মদ সাঃ প্রতি সোমবার করে রোজা রাখতেন এবং তাকে এই ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হলে জবাবে তিনি বলেন, সোমবারে তিনি জন্ম গ্রহন করেছেন এবং এই দিনেই তিনি নবুয়ত প্রাপ্ত হয়েছেন আর সেই কারনেই শুকরিয়া স্বরুপ এই দিনে রোজা রাখতেন।

প্রতি সোমবারে বিশ্বনবী কেন রোজা রাখতেন এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন – 

“এই দিনে আঁমার বেলাদত শরীফ হয়েছে, এই দিনে আঁমি প্রেরিত হয়েছি এবং পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ এই দিনেই আঁমার উপর নাজিল হয়েছে।”

এছাড়াও প্রতি সোমবার রোজা রাখার পেছনে আরেকটি কারন উল্লেখ করে রাসুল (সাঃ) বলেন –“হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃইরশাদ করেছেন: সোমবার ও বৃহস্পতিবার আমল উপস্থাপন করা হয় [আল্লাহর কাছে]।আর আঁমার আমল উপস্থাপন করার সময় রোযারত থাকাকে পছন্দ করছি।”

হিজরি ৪র্থ শতাব্দীর প্রায় মাঝের দিকে ঈদে মিলাদুন্নবীর প্রথম প্রচলন শুরু হয়। পরবর্তীতে ৭ম হিজরির দিকে এই মিলাদুন্নবী ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়তে থাকে। এই মিলাদুন্নবীর প্রথম প্রবর্তনা খলিফা আল মুয়িজ্জু লি-দীনিল্লাহ। ৪র্থ হিজরি থেকে এটি শুরু হলেও আনুষ্ঠানিক রূপ পায় ৭ম হিজরিতে। তাই এটা বলায় যায় রাসূল (সাঃ), সাহাবী গন দের সময়ে কোন ঈদে মিলাদুন্নবী বলতে কিছুই ছিল না। এই ৭ম হিজরি ছিল ইসলাম পরবর্তী বর্বর যুগ। এই যুগে মুসলিমগণ বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে গিয়েছিল আর তাদের মাঝে প্রায়ই গৃহযুদ্ধ লেগে থাকত।

যারা ঈদে মিলাদুন্নবী পালন করেন ও এটিকে সমর্থন করেন তাদের দেওয়া কিছু যুক্তি হলো। আল্লাহ তায়ালা আল কোরআনে বলেন।

“আল্লাহর অনুগ্রহ ও রহমত প্রাপ্তিতে খুশি পালন কর যা তোমাদের সমস্ত ধন দৌলত অপেক্ষা শ্রেয়।” – (সূরা ইউনুস-৫৮)

অপর একটি আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন, “আমি নিশ্চয় আপনাকে পুরো বিশ্বের জন্য রহমত স্বরূপ প্রেরণ করেছি”।

তো এখান থেকে বোঝা যায় যে, যেহেতু এই দিনে রাসুল সাঃ এর আগমন ও নবুয়ত প্রাপ্তি হয়েছে তাই আমরা চাইলেই এই দিনটাকে ঈদ হিসেবে পালন করতেই পারি। কিন্তু সমস্যা হলো এই একিই দিনে আবার রাসূল সাঃ ওফাত বরন করেন। তাহলে যেদিন আমাদের রাসুল সাঃ মৃত্যু বরন করলেন সেইদিনে কিভাবে একজন মুসলিম হিসেবে আপনি আনন্দ উৎসব করতে পারেন? 

পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন “কিতাবধারী হে! নিজেদের ধর্ম নিয়ে অযথা বাড়াবাড়ি কোরো না। আর (ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করে) তোমাদের আগে যারা নিজেরা পথভ্রষ্ট হয়ে ও অন্যদেরকে পথভ্রষ্ট করে সহজ সরল পথচ্যুত হয়েছে, তাদের পথ অবলম্বন কোরো না।” (সুরা মায়িদা : ৭৭)

“হে কিতাবধারীরা! তোমরা তোমাদের ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়িতে লিপ্ত হয়ো না। আর আল্লাহ সম্বন্ধে যথাযথ বলো।” (সুরা নিসা : ১৭১)

উপরের আয়াত দুইটির মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা স্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিয়েছে যে, ইসলামে ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ির কোন স্থান নাই। তাই আমাদের উচিত না এইসব বিষয় নিয়ে অতিরিক্ত বাড়াবাড়ি করা। যেহেতু এই বিষয় নিয়ে ইসলাম বিশেষজ্ঞদের মাঝে মতো বিরোধ রয়েছে আর এটি কোন ফরজ বা ওয়াজিব বা সুন্নাত কোন ইবাদত ও না অথবা এটি এমন কিছুও না যে যেটি না করলে আমাদের গুনাহ হবে তাই এইসব এড়িয়ে চলায় আমাদের জন্য উত্তম।

বিদাই হজ্বের ভাষনে রাসূল (সাঃ) সমবেত জনতার উদ্দেশ্যে যে ভাষন দিয়েছিলেন, সেখানে তিনি বলেছিলেন-

“আমি তোমাদের জন্য দুটি জিনিস রেখে যাচ্ছি যতদিন আকড়ে ধরবে ততদিন পথভ্্রষ্ট হবে না। একটি হলো আল্লাহর কিতাব এবং অপরটি আমার সুন্নাহ্” (মিশকাত-১ম খন্ড হাদিস নং-১৭৭)

অর্থাৎ রাসুল (সাঃ) আমাদের বলে গেছেন আমরা যেন কেবল মাত্র আল্লাহ প্রদত্ত আল কোরান ও রাসূল (সাঃ) এর হাদিস অনুসরণ করি তাহলেই আমরা কখনো পথভ্রষ্ট হব না। আর আমাদের ও সেটিই করা উচিত৷ বর্তমান সময়ে। আর যেহেতু কোরান হাদিসে এই মিলাদুন্নবী সম্পর্কে সরাসরি কোন হুকুম নাই তাই আমাদের উচিত এসব থেকে দূরে থাকা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *