সৈয়দপুরে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আর বাড়ি দখল নিতে গৃহবধূকে নির্যাতন

জাহিদুল হাসান, স্টাফ রিপোর্টার,নীলফামারী।। নীলফামারীর সৈয়দপুর শহরের ব্যবসায়ী পারভেজ আলমের সঙ্গে ১৪ বছর আগে পরিবারের সম্মতিতে শাহীন পারভীনের বিয়ে হয়। তিন বছরের মাথায় এ দম্পতির সংসারে দুটি ছেলেসন্তানের জন্ম হয়। হাসি–আনন্দে কাটছিল তাদের জীবন। 

২০১০ সালে স্বামীর আকস্মিক মৃত্যুর পর সেই সুখ বেশি দিন স্থায়ী হয়নি। ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান আর বাড়ি দখল নিতে মরিয়া হয়ে উঠে শ্বশুরবাড়ির লোকজন। একপর্যায়ে তাঁর ওপর শুরু হয় শারীরিক–মানসিক নির্যাতন। 

এরই ধারাবাহিকতায় সোমবার (২ সেপ্টেম্বর) বাসায় শাহীন পারভীনকে মারধর করে ভাশুরের ছেলে-মেয়ে ও জামাতা। দুপুরে আহতাবস্থায় মাকে সৈয়দপুর থানায় নিয়ে আসে দুই ছেলে। এ সময় সেখানে তাঁদের জীবনের গল্প শুনে উপস্থিত পুলিশ, সাংবাদিক ও সেবাগ্রহীতা অনেককেই চোখ মুছতে দেখা যায়। 

শাহীন পারভীন জানান, তাঁর স্বামী পারভেজ আলম ছিলেন পরিবারের মূল উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। তাঁর আয়ে পুরো সংসার চলত। ব্যবসা ও পারিবারিক সম্পত্তির সবই তাঁর উপার্জনে করা। গত ২০১০ সালে স্বামীর আকস্মিক মৃত্যু হয়। তাঁর মৃত্যুর পর শ্বশুর খোরশেদ আলম ও ভাশুর জমসেদ আলমসহ তাঁর সন্তানেরা সম্পত্তি কুক্ষিগত করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হন। 

ব্যবসা ও বাড়ি দখলে নিতে তাঁকে বারবার সন্তানসহ বের করে দেওয়ার চেষ্টা করে। প্রতিবাদ করলে তাঁর ওপর অমানবিক নির্যাতন শুরু করে। এ বিষয়ে একাধিকবার স্থানীয়ভাবে বিচার–সালিসও হয়েছে বলে জানান তিনি। 

তিনি আরও জানান, আজ সকালে বাড়ির গ্যারেজ দখলে নিতে তাঁর ব্যবহৃত গাড়িটি রাস্তায় ফেলে রাখে। প্রতিবাদ করলে ভাশুরের ছেলে নুর আলম, মেয়ে ফাতেমা বুবলী ও তাঁর স্বামী শাহনেওয়াজ খান সাজু তাঁকে রাস্তায় নির্যাতন করেন। এলাকাবাসী এগিয়ে এসে তাঁকে উদ্ধার করে। 

এ সময় আহত মাকে ছেলে নুরে এলাহি ইব্রাহিম ও নুর ইসাহাক সৈয়দপুর ১০০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যায়। পরে থানায় গিয়ে তিনি লিখিত অভিযোগ দেন। 

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে ভাশুরের মেয়ে ফাতেমা আক্তার বুবলী বলেন, ‘চাচি শাহীন পারভীনের পছন্দ মতো অংশটুকু বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। তারপরও আমাদের নিজস্ব জায়গায় ইটের দেয়াল নির্মাণকাজে বাধা দেন তিনি। এ সময় তাদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে। এতে তিনি ও তার বোন আহত হয়েছেন।’ 

এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট পৌর কাউন্সিলর এরশাদ হোসেন পাপ্পু বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে দুই পরিবারের মধ্যে বিবাদ চলছিল। এ নিয়ে বেশ কয়েকবার সালিস বৈঠক হয়েছে। কিন্তু পরে আবারও দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ে তারা।’ 

সৈয়দপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) আখতার হোসেন বলেন, ‘অভিযোগ পেয়েছি এবং ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *