এস এম আওলাদ হোসেন, সিনিয়র রিপোর্টার।।
লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলায় চোর সন্দেহে ৫০ বছর বয়সী এক মানসিক ভারসাম্যহীন ভবঘুরে ব্যক্তিকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় এক দল যুবকের বিরুদ্ধে। ঘটনার ১৩ দিন পার হলেও এখনও কাউকে গ্রেফতারকরতে পারেনি পুলিশ।
জড়িতদের গ্রেফতার ও বিচার দাবিতে এলাকাবাসীর মাঝে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ৮ জুন রাত আনুমানিক আড়াইটার দিকে উপজেলার চর পোড়াগাছা ইউনিয়নের পূর্ব চর কলাকোপা গ্রামে দুলাল সরদারের দোকানের সামনে মানসিক ভারসাম্যহীন ওই ব্যক্তিকে চোর সন্দেহে বেধড়ক মারধর করা হয়।
পরদিন ৯ জুন সকালে গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে নিলে দুপুর সোয়া ১২টার দিকে তার মৃত্যু হয়। ঘটনার পর ১০ জুন রামগতি থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মজিবুর রহমান বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ১০ থেকে ১৫ জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেন।
তবে এখন পর্যন্ত কারও নাম এজাহারে উল্লেখ না থাকায় অভিযুক্তরা রয়ে গেছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। স্থানীয়রা জানান, অভিযুক্তরা হলেন- মৃত মুকবুল আহম্মদের ছেলে ফখর উদ্দিন, জসিম উদ্দিনের ছেলে মাকসুদ, সাহাদাত হোসেনের ছেলে আজম, সহীদের ছেলে আরিফ, মালেকের ছেলে সবুজ, সিরাজ ডুবাইর ছেলে মাকসুদ, মুনাফের ছেলে আবদুল কাদের, খলিলের ছেলে জিটু এবং হাসিমের ছেলে হাবিবউল্লাহ।
এদের মধ্যে কয়েকজন পিটিয়ে আহত ব্যক্তিকে হাসপাতালে নিয়ে যান এবং মিথ্যা সড়ক দুর্ঘটনার গল্প সাজিয়ে ভর্তি করেন। এরপর থেকেই সবাই পলাতক।
স্থানীয় কয়েকজন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ব্যক্তি জানান, চর পোড়াগাছা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল আমিন ও ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য ইব্রাহিম ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে অভিযুক্তদের পরিবারের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়েছেন।
এমনকি মামলা থেকে নিজেদের লোকজনকে বাঁচাতে তালিকা তৈরি করে পুলিশের ওপর প্রভাব খাটানোর অভিযোগও উঠেছে তাদের বিরুদ্ধে।
স্থানীয় ব্যবসায়ী ও মসজিদ কমিটির সদস্যরা জানান, ঘটনার রাতেই অভিযুক্ত যুবকরা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে আড্ডা দিচ্ছিল। সেখানে ঘোরাফেরা করা মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তিকে তারা চোর সন্দেহে মারধর করে রাস্তায় ফেলে রাখে। সকালবেলা এলাকাবাসী তাকে আহত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন।
রামগতি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কবির হোসেন বলেন, ঘটনার সঙ্গে কারা জড়িত, সে বিষয়ে তদন্ত চলছে। কয়েকজনের নাম পাওয়া গেছে। সঠিক তথ্য নিশ্চিত হওয়ার পর তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।
চেয়ারম্যান ও মেম্বারকে ঘিরে যেসব অভিযোগ উঠেছে, সেগুলোর বিষয়েও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পরিদর্শক (তদন্ত) মো. মাহবুবুর রহমান পিপিএম বলেন, মামলাটি গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করা হচ্ছে। আশা করছি, দ্রুতই আসামিদের গ্রেফতার করা সম্ভব হবে।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, নিহত ব্যক্তির কোনো পরিচয় পাওয়া না যাওয়ায় তাকে বেওয়ারিশ মরদেহ হিসেবে দাফন করা হয়েছে। স্থানীয় লোকজন জানান, নিহত ব্যক্তি গত ১৫ থেকে ২০ দিন ধরে আজাদনগর বাজার এলাকায় ঘুরাফেরা করছিলেন। তাকে কখনো ভিক্ষা করতে, কখনো অপ্রাসঙ্গিক কথা বলতে দেখা যেত। কেউ চেনেন না বা কোনো স্থায়ী ঠিকানা জানা যায়নি।