প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস ‘পদত্যাগের বিষয়ে ভাবছেন’– তার সঙ্গে হঠাৎ দেখা করে আসা জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের বরাতে এমন খবর দিয়েছে বিবিসি বাংলা।
নানা ধরনের গুঞ্জনের মধ্যে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন নাহিদ ইসলাম।
এদিন সন্ধ্যা ৭টার পরে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনায় যান গণ অভ্যুত্থানের নেতাদের দল এনসিপির এই আহ্বায়ক।
আধা ঘণ্টার বেশি সময় ধরে চলা এ সাক্ষাতের বিষয়ে দলটির যুগ্ম সদস্য সচিব মুশফিক উস সালেহীন বলেন, তারা ‘চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে’ আলাপ করেন।
পরে রাতে এ বৈঠকের আলোচনার বিষয়বস্তুর বিষয়ে নাহিদের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, “প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, তিনি কাজ করতে এসেছেন, কাজ করার মত পরিস্থিতি না থাকলে তিনি পদত্যাগের বিষয়টি ভাববেন।”
মুশফিক বলেন, “সেসময় নাহিদ এমন কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে জুলাই অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা, জুলাইয়ের ত্যাগের প্রতি দায়বদ্ধতা, তার উপরে পুরো দেশের মানুষের আস্থা এবং জাতীয় ঐক্যের বিষয়ে ভেবে দেখার জন্য প্রধান উপদেষ্টার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।”
যমুনা থেকে নাহিদ চলে যাওয়ার কিছুক্ষণ পর মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে দেখা করেন সরকারে থাকা দুই ছাত্র উপদেষ্টা মাহফুজ আলম ও আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।
এ বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস অফিসের একজন সদস্য বলেন, “তাদের এমন সাক্ষাৎ প্রায়ই হয়ে থাকে। কাজের প্রয়োজনে এটা ওনারা বিভিন্ন সময় করে থাকেন।”
কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এক দফার সরকার পতনের আন্দোলনে রূপ নিলে ২০২৪ সালের ৫ অগাস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। প্রবল জনরোষের মুখে সেদিনই শেখ হাসিনা পালিয়ে ভারতে চলে যান।
এরপর আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের আহ্বানে সাড়া দিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হতে রাজি হন নোবেল বিজয়ী মুহাম্মদ ইউনূস। সরকার পতনের তিন দিন পর ৮ অগাস্ট অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করেন তিনি।
এর সাড়ে নয় মাস পর নির্বাচন নিয়ে বিএনপি ও অভ্যুত্থানের নেতাদের দল জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) ভিন্ন অবস্থানের মধ্যে ঢাকা দক্ষিণের মেয়র পদে বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনের শপথ পড়ানো নিয়ে আন্দোলনের মধ্যে বক্তব্য-পাল্টা বক্তব্যের ঘটনা ঘটে। দুই পক্ষই কিছু উপদেষ্টাদের পাল্টাপাল্টি পদত্যাগ দাবি করে।
এ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনার মধ্যে সেনানিবাসে সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামান ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন দেওয়ার বিষয়ে কথা বলেছেন বলে খবরে এসেছে।
এমন প্রেক্ষাপটে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা ধরনের গুঞ্জনের মধ্যে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করতে যান নাহিদ; যিনি এনপিপির দায়িত্ব নিতে গত ফেব্রুয়ারিতে অন্তর্বর্তী সরকার থেকে পদত্যাগ করেন।
ওই বৈঠকের পর নাহিদকে উদ্ধৃত করে বিবিসি বাংলার এক খবরে বলা হয়েছে, প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস পদত্যাগের বিষয়ে ভাবছেন বলে এনসিপি আহ্বায়ককে জানিয়েছেন।
এতে বলা হয়, দেশের চলমান পরিস্থিতিতে প্রধান উপদেষ্টা কাজ করতে পারবেন না– এমন শঙ্কা তিনি নাহিদ ইসলামের কাছে প্রকাশ করেছেন।
তবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক থেকে পরে উপদেষ্টার দায়িত্ব নেওয়া নাহিদ পদত্যাগের মত সিদ্ধান্ত না নিতে ইউনূসের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
নাহিদের বরাতে বিবিসি লিখেছে, "দেশের চলমান পরিস্থিতি, স্যারের তো পদত্যাগের একটা খবর আমরা আজ সকাল থেকে শুনছি। তো ওই বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে স্যারের সাথে দেখা করতে গেছিলাম।
"স্যার বলছেন, আমি যদি কাজ করতে না পারি...যে জায়গা থেকে তোমরা আমাকে আনছিলা একটা গণ অভ্যুত্থানের পর। দেশের পরিবর্তন, সংস্কার...। কিন্তু যেই পরিস্থিতি, যেভাবে আন্দোলন বা যেভাবে আমাকে জিম্মি করা হচ্ছে। আমিতো এভাবে কাজ করতে পারবো না। তো রাজনৈতিক দলগুলা তোমরা সবাই একটা জায়গায়, কমন জায়গায় না পৌঁছাতে পারো।"
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে শপথ পড়ানোকে কেন্দ্র করে বিএনপি ও ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের দল এনসিপির মধ্যে কথার লড়াই চলছে সপ্তাহখানেক ধরে।
বিএনপির পক্ষ থেকে অন্তর্বর্তী সরকারে থাকা দুই ছাত্র উপদেষ্টা মাহফুজ আলম ও আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার পদত্যাগ চাওয়া হচ্ছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে প্রধান উপদেষ্টার নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা খলিলুর রহমানের নাম।
এনসিপির পক্ষ থেকে অন্তর্বর্তী সরকারে থাকা ‘বিএনপিপন্থি’ উপদেষ্টা আসিফ নজরুল, সালেহউদ্দিন আহমেদ ও ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদের পদত্যাগ চাওয়া হয়েছে।
এমন পরিস্থিতিতে নানা গুঞ্জন তৈরি হওয়ার মধ্যে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করেন নাহিদ।